পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীবিলাস
১১৫

 শচীশ বলিল, “বিশ্রী, তোমরা আমার বাড়িটা ভোগ করো-সে।”

 আমি বলিলাম, “তুমিও আমাদের সঙ্গে আসিয়া যোগ দাও, আবার আমরা কাজে লাগিয়া যাই।”

 শচীশ বলিল, “না, আমার কাজ অন্যত্র।”

 দামিনী বলিল, “আমাদের বউভাতের নিমন্ত্রণ না সারিয়া যাইতে পারিবে না।”

 বউভাতের নিমন্ত্রণে আহুতদের সংখ্যা অসম্ভবরকম অধিক ছিল না। ছিল ঐ শচীশ।

 শচীশ তো বলিল, আমাদের বাড়িটা আসিয়া ভোগ করো, কিন্তু ভোগটা যে কী সে আমরাই জানি। হরিমোহন সে বাড়ি দখল করিয়া ভাড়াটে বসাইয়া দিয়াছেন। নিজেই ব্যবহার করিতেন, কিন্তু পারলৌকিক লাভলোকসান সম্বন্ধে যারা তাঁর মন্ত্রী তারা ভালো বুঝিল না— ওখানে প্লেগে মুসলমান মরিয়াছে। যে ভাড়াটে আসিবে তারও তো একটা— কিন্তু কথাটা তার কাছে চাপিয়া গেলেই হইবে।

 বাড়িটা কেমন করিয়া হরিমোহনের হাত হইতে উদ্ধার করা গেল, সে অনেক কথা। আমার প্রধান সহায় ছিল পাড়ার মুসলমানরা। আর কিছু নয়, জগমোহনের উইলখানা একবার তাদের দেখাইয়াছিলাম। আমাকে আর উকিলবাড়ি হাঁটাহাঁটি করিতে হয় নাই।

 এ পর্যন্ত বাড়ি হইতে বরাবর কিছু সাহায্য পাইয়াছি, সেটা বন্ধ হইয়াছে। আমরা দুইজনে মিলিয়া বিনা সহায়ে ঘর করিতে