পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোণ R ক্ৰোধ, বিরক্তি আর বিষাদে রাজকুমারের অনুভূতির আধারে ফেনিল আবর্তের সৃষ্টি হয়। তীব্র সঙ্কীর্ণ বেদনার পুনরাবৃত্তিময় ংক্ষিপ্ত আবেদন ক্ষণিকের নিবিকার শান্তিতে লয় পায় আর আর্তনাদ করিয়া ওঠে। সে অনুভব করে, স্পষ্ট হইতে স্পষ্টতর ভাবে অনুভব করে, ভয় ও শ্রদ্ধার বশ্যতা, কাব্য ও স্বপ্নের মোহ, আবেগ ও উত্তেজনার তাগিদ, কিছুই মালতীকে ভুল করিতে দিবে না। তার দিকে মালতীর গতি বন্ধ করিয়া কোনদিকে তাকে চলিতে হইবে দেখাইয়া দিবার কথা সে যা ভাবিয়াছিল, তার কোন প্রয়োজন ছিল না । মালতী আর আগাইবে না । সে ডাকিলেও নয়, হাত ধরিয়া টানিলেও নয়। শুধু আজ নয়, চিরদিন এই পর্যন্তই ছিল মালতীর ভুলের সীমা । ভুল কি ভুল নয় তাও হয়তো মালতী জানে না, এখনো হয়তো সে ধরিয়া রাখিয়াছে আজ রাত্রিই তার প্রিয় মলিনের রাত্রি, কিন্তু রাজকুমার দু’বাহু বাড়াইয়া দিলে সে আসিয়া ধরা দিবে না। মালতীর সম্বন্ধে এ যে তার কল্পনা নয়। সে বিষয়ে রাজকুমারের এতটুকু সন্দেহ থাকে না, অশোকতরু মূলে ক্লেশপাণ্ডুরবর্ণা অধোমুখী সীতার দিকে চাহিয়া দেবতা ব্ৰহ্মা আর রাক্ষসী নিকষার পুত্র রাবণ যে যন্ত্রণায় অমরত্বের প্রতিকার চাহিত, রাজকুমারও তেমনি যন্ত্রণা ভোগ করে। রাবণের তবু মন্দোদরী ছিল, জীবনে রাবণ তবু ভালবাসিয়াছিল সেই একটিমাত্র নারীকে, একটু যে ভালবাসিবে রাজকুমার এমন তার কেউ নাই । তা ছাড়া, তার সীতাকে সে ফিরাইয়া দিতে চাহিয়াছিল। প্ৰায় গায়ের জোরের মতই ব্যক্তিত্বের প্রভাবকে ছল বল কৌশল করিয়া রাখিয়া এতদিন সে মালতীকে হরণ করিয়া রাখিয়াছিল, আজ ভাবিয়াছিল তার মনটি পর্যন্ত মুক্ত করিয়া শ্যামলকে ফিরাইয়া দিবে। এই উদারতার কল্পনাটুকু পর্যন্ত তার মিথ্যা, অকারণ অহঙ্কার বলিয়া প্ৰমাণিত হইয়া গেল ! নিছক অহঙ্কার, অতি সস্তা আত্মতৃপ্তি, নিজেকে কেন্দ্ৰ করিয়া শিশুর মত রূপকথা রচনা করা । মালতী কবে তার বশে ছিল যে