পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোণ 38 মনোরমাকে দেখিলে চমক লাগিয়া যায় । বিষাদ ও হতাশার যন্ত্রণায় মুখ যেন তার কালো হইয়া বঁকিয়া গিয়াছে। কালীর বদলে তাকেই যেন প্রত্যাখ্যান করিয়াছে রাজকুমার, বুক তার ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, হাড়-পাঁজর সমেত । মমতা বোধ করার বদলে তাকে রাজকুমারের আঘাত করিতে ইচ্ছা হয়। তার সংস্পর্শে আসিয়া তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়িয়া তুলিবার প্রয়োজনে কালীর কিশোর মনে বিকার আসিতেছে ভাবিয়া সে দুঃখ পাইতেছিল, কালীর মধ্যস্থতায় নিজের মনের আবছায়া গোপনতার অন্তরালব্যতিনী মনোরমা তার সঙ্গে কি অদ্ভুত যোগাযোগ সৃষ্টি করিয়াছে দ্যাখো । কালীর আবির্ভাবের আগের ও পরের মনোরমার অনেক তুচ্ছ কথা, ভঙ্গি, ভাব ও চাহনি, অনেক ছোট বড় পরিবর্তন, রাজকুমারের মনে পড়িতে থাকে। মনে পড়িতে থাকে, শেষের দিকে তার সমাদর ও অবহেলায় কালীর মুখে যে আনন্দ ও বিষাদের আবির্ভাব ঘটিত, কতবার মনোরমার মুখে তার প্রতিচ্ছায়া দেখিয়াছে। কালীর চেয়েও মনোরমার প্রত্যাশা ও উৎকণ্ঠ মনে হইয়াছে গভীর। মনোরমা মরার মত বলে,-আমি ভাবছি ও ছুড়ি না। সারাটা জীবন জ্বলে পুড়ে মরে। আমি কি করলাম রাজুভাই ? মনোরমা পর্যন্ত বিকারের অর্ঘ্য দিয়া নিজের জীবনে তাকে অভ্যর্থনা করিয়াছে, এ জ্বালা রাজকুমার ভুলিতে পারিতেছিল না। অশ্রুজিলের ইতিহাস হয়তো আছে, নিপীড়িত বন্দী-মনের স্বপ্ন-পিপাসা হয়তো প্রেরণা দিয়াছে, তবু রাজকুমার মনোরমাকে ক্ষমা করিতে পারে না, নিষ্ঠুরভাবে ধমক দিয়া বলে,- কি বকছ পাগলের মত ? কালী তোমার মত কাব্য জানে না দিদি । দিব্যি হেসে খেলে জীবন কাটিয়ে দেবে, তোমার ভয় নেই। মনোরমা বিস্ফারিত চোখে চাহিয়া থাকে। রাজকুমার আঘাত করিলেও সে বুঝি এতখানি আহত হইত না। দুদিন পরে নিজেই সে কালীকে তার মার কাছে রাখিয়া আসিতে যায়। আর ফিরিয়া