পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোশ R কি করা যায় এখন ? একজন তাকে ডাকিতেছে অন্দরে, একজন ডাকিতেছে বাহিরে। কারও ডাকে সাড়া দিবার উপায় নাই। নিজেকে যদি দু’ভাগ করিয়া ফেলা যায়, তবু দু’জনকে খুশী করা যাইবে না। এমন হাস্যকর অথচ এমন গুরুতর অবস্থায় কি মানুষ কখনো পড়ে ? রাজকুমার বেশ বুঝিতে পারিতেছিল, দু'জনের মধ্যে একটা সাময়িক ও কৃত্রিম আপাস ঘটাইয়া দেওয়াও সম্ভব হইবে না । তার কাছে ছেলেমানুষী মনে হইতেছে, কিন্তু এটা ওদের ছেলেমানুষী নয় যে সমস্ত ব্যাপারটাকে হাসিয়া উড়াইয়া দেওয়া চলিবে । তার কথার কোন দাম এখন ওদের কাছে নাই। আর কিছুই তার কাছে এখন ওরা চায় না, শুধু চায় যে একজনের হুকুম মানিয়া আরেকজনের মাথা সে হেঁট করিয়া দিবে। রিনি অধীর হইয়া বলিল,-এসো ? মালতী হাসিমুখে বলিল,-আসুন ? তখন রাজকুমার সেইখানে স্থির হইয়া দাড়াইয়া মালতীকে বলিল, -এদিকে এসো তো একটু ! মালতী বলিল,-আবার ওদিকে কেন ? চলুন যাই । কিন্তু মালতী কাছে আসিল। যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলাতক ভীরু ও কাপুরুষ সৈনিকের মত রাজকুমার তার পাশ কাটাইয়া পলাইয়া গেল বাহিরে! বাহির হইতে দরজার পিতলের কড়া দুটিতে বাধিয়া দিল পকেটের নস্যমাখা ময়লা রুমালটি। গেট পার হইয়া রাস্তায় পা দিয়া তার মনে হইতে লাগিল, মাথা ধরাটা একেবারে সারিয়া গিয়াছে। একটু যেন কেবল ঘুরিতেছে মাথাটা, ছেলেবেলায় নাগরদোলা অনেকক্ষণ পাক খাইয়া মাটিতে নামিয়া দাড়াইবার পর যেমন ঘুরিত।