পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোণ Y9) নয়, আতঙ্কে । শেষ পর্যন্ত কিছুই যদি বলিতে না পারে, এমনিভাবে তোতলার মত দুচারটি শব্দ উচ্চারণ করিয়া যদি তাকে বসিয়া পড়িতে হয় ! অবরুদ্ধ উত্তেজনায় সভা থমথম করিতেছে, একটা অঘটন ঘটিবার সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, তারই প্ৰত্যাশার উত্তেজনা । মরিয়া হইয়া মনে মনে রাজকুমার বলিতে থাকে, একটা কিছু করা দরকার, দু’ এক সেকেণ্ডের মধ্যে তার কিছু করা দরকার, শুধু ওইটুকু সময় হয়তো তার এখনো আছে। বক্তব্য ? নাই বা রহিল বক্তব্য তার বক্তৃতায় ? বড় বড় কথা নাই বা সে বলিতে পারিল ? যা মনে আসে বলিয়া যাক, অন্ততঃ বক্তৃতা তো দেওয়া হইবে। চুপ করিয়া এমন ভাবে দাড়াইয়া থাকার চেয়ে সে অনেক ভাল । একবার সে চাহিল রিনি। মালতী সরসীর দিকে, তারপর বলিতে আরম্ভ করিল। মাদ্রাজের মেয়েদের সম্বন্ধে ? কি সে বলিবে মাদ্রাজের মেয়েদের সম্বন্ধে ? যে চিরন্তন রহস্য যুগে যুগে দেশে দেশে নারীজাতিকে দুৰ্বোধ্য করিয়া রাখিয়াছে, মাদ্রাজের মেয়েরা তো তার কাছে সে রহস্যের ঘোমটা খুলিয়া তাদের জানিবার বুঝিবার সুযোগ তাকে দেয় নাই। সুতরাং সাধারণ ভাবে দু’চারটি কথা বলাই ভাল। গরম কান ঠাণ্ডা হয়, কথার জড়তা কাটিয়া যায়, মৃদু মৃদু রহস্যের সুরে কখনো গম্ভীর ও কখনো হাসিমুখে রাজকুমার বলিয়া যায়। মাঝে মাঝে তার মনে হইতে থাকে বটে যে সে আবোল-তাবোল বকিতেছে, কিন্তু নারীজাতি সম্বন্ধে তার জ্ঞানের পরিচয় পাইয়া সভার মেয়েরা একেবারে অভিভূত হইয়া যায়। রাজকুমার আসন গ্ৰহণ করিলে শ্যামল উঠিয়া দাড়াইল। রাজকুমারের চেয়ে বয়সে দু'এক বছরের ছোট হইলেও লম্বা চওড়া চেহারা আর মুখের ভারিকি গড়নের জন্য তাকেই বড় দেখায়। এতক্ষণ সে মালতীর পাশে মুখ ভার করিয়া বসিয়া ছিল। তীব্র দৃষ্টিতে রাজকুমারের মুখের দিকে চাহিয়া বক্তৃতা শুনিতে শুনিতে মাঝে মাঝে