পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোণ। ব্যাপারটা আরও ভাল করিয়া বুঝিবার জন্য তার উৎসাহ বাড়িয়া যায়। তার এই খাপছাড়া গবেষণার যে একটি অতি বিপজ্জনক দিক আছে এটা তার খেয়ালও থাকে না । যে রাজকুমারের এতকাল দেখা পাওয়াই কঠিন ছিল। হঠাৎ তার ঘন ঘন আবির্ভাব ঘটতে থাকায় এবং তার শান্ত নির্বিকার দৃষ্টি তীক্ষ ও অনুসন্ধিৎসু হইয়া উঠায় আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের বাড়ির মেয়েদের চমক লাগিয়া যায়। রাজকুমারের ব্যগ্ৰ উৎসুক চাহনি সর্বাঙ্গে সঞ্চারিত হইতেছে দেখিয়া কেউ দারুণ অস্বস্তি বোধ করে, কেউ মনে মনে রাগিয়া যায়, কেউ অনুভব করে রোমাঞ্চ । প্ৰত্যেকে তারা বিস্ময়ের সঙ্গে ভাবিতে থাকে, এতকাল পরে আমার মধ্যে হঠাৎ কি দেখলে যে এমন করে তাকিয়ে থাকে ? কেউ তার সামনে আসাই বন্ধ করিয়া দেয়, কেউ কথা ও ব্যবহারে কঠিনতা আনিয়া দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করে, কেউ আরও কাছে সরিয়া আসিতে চায়। রিনি, সরসী আর মালতী রাজকুমারের এই অদ্ভুত আচরণ তিন ভাবে গ্ৰহণ করিয়াছে। আশ্চর্য হইয়া গিয়াছে তিন জনেই, অস্বস্তিও রোধ করিয়াছে প্ৰায় একই রকম, কিন্তু ব্যাপার বুঝিবার চেষ্টায় তাদের মনে এমন ভিন্ন ভিন্ন চিন্তার উদয় হইয়াছে যে জানিতে পারিলে মানুষের মন সম্বন্ধেও একটা নূতন জ্ঞান খুব সহজেই রাজকুমারের জন্মিয় যাইত । রিনি ভাবে ঃ এতদিনে কি বুঝিতে পারা গেল সেদিন গান প্র্যাকটিস করার সময় সে আমন আগ্রহের সঙ্গে মুখ বাড়াইয়া দিলে রাজকুমার তাকে কেন অপমান করিয়াছিল ? রাজকুমারের মন কবিত্বময়, বাস্তব জগতের অনেক উচুতে নিজের মানস-কল্পনার জগতে সে বাস করে ; বড় ভাবপ্রবণ প্ৰকৃতি রাজকুমারের। তার মনের ঐশ্বৰ্য রাজকুমারকে মুগ্ধ করিয়াছে, তার হাসি কথা গান ভাবালোকের অপার্থিব আনন্দ দিয়াছে রাজকুমারকে, তার সান্নিধ্য অনুভব করিয়াই রাজকুমারের মন এমনভাবে অভিভূত হইয়া গিয়াছে যে একটি চুম্বনের প্রয়োজনও সে