পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাৎস্য ন্যায়
২৩

ন্ধ্যাবেলা দিবাকর পাঁচ নম্বর শেওড়াতলা লেনে উপস্থিত হল। গণপতি অবিবাহিত, একটা চাকর নিয়ে একাই আছে। কি একটা খবরের কাগজে কাজ করে, জমি বাড়ি আর পুরনো মোটরের দালালিও করে। তার বসবার ঘরে একটা তক্তপোশের উপর শতরঞ্জি পাতা, দুটো তাকিয়া আর কতকগুলো পত্রপত্রিকা ছড়ানো। দেওয়ালে একটা র‍্যাকে কিছু বই আছে।

 চাকরকে দু পেয়লা চায়ের ফরমাশ দিয়ে গণপতি বলল, মাৎস্য সমাজের নাম শুনেছ? তোমাকে তার মেম্বার হতে হবে। ভয় নেই, প্রথম এক বৎসর চাঁদা দিতে হবে না।

 দিবাকর বলল, মাৎস্য সমাজের কাজটা কি? ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে হয় নাকি? মৎস্য ধরিবে খাইবে সুখে— এই কি তোমার উপদেশ?

 —সত্যিকারের মৎস্য নয়, মনুষ্যরূপী মৎস্যকে খাবলে খেতে হবে। মাৎস্য ন্যায় শুনেছ? মহাভারতে আছে—

নারাজকে জনপদে স্বকং ভবতি কস্যচিৎ।
মৎস্যা ইব জনা নিতাং ভক্ষয়ন্তি পরস্পরম্॥

 অর্থাৎ অরাজক জনপদে কারও নিজস্ব কিছু নেই, লোকে মৎস্যের ন্যায় সর্বদা পরস্পরকে ভক্ষণ করে। এদেশে অবশ্য ঠিক অরাজক অবস্থা এখনও হয় নি, তবে মাৎস্য ন্যায়ের সূত্রপাত হয়েছে, পরস্পর ভক্ষণের সুযোগ দিন দিন বাড়ছে। এখানে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য বা হারুন অল রসিদের নির্মম দণ্ডবিধি নেই, কমিউনিস্ট বা ফাসিস্টদের দুর্দান্ত শাসনও নেই, পাঁচ ভুতের লীলাখেলা চলছে। এরই সুযোগ আমরা মাৎস্য সমাজীরা নিয়ে থাকি।

 —মাৎস্য সমাজের তুমি একজন কর্তা ব্যক্তি নাকি?