পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাৎস্য ন্যায়
২৯

তাকে বলল, এ কিছুই হচ্ছে না দিবুদা, যা বলি শোন। সমাজের সব চাইতে বড় শত্রু হল ধনীদের মেয়েরা, তাদের গহনা যোগাবার জনোই বড়লোকরা গরিবদের শোষণ করে। সেকরার দোকান হচ্ছে প্রলোভনের আড়ত, মেয়েদের মাথা খাবার আস্তানা। তাই আমাদের ধ্বংস করতে হবে।

 দু দিন পরে সন্ধ্যার সময় খিদিরপুরে একটা গহনার দোকান লুট হল। লুটের মাল নিয়ে কালীধন পালাল, কিন্তু দিবাকর ধরা পড়ল। সাজা হল দু বছর জেল। তার মুরুব্বী বললেন, এহেহে বড়ই কাঁচ। কাজ করে ফেলেছ হে দিবাকর, এ বুদ্ধি তোমার কেন হল! ভেবো না, দু বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে, তার পর বেরিয়ে এসে নামটা বদলে ফেলবে আর খুব হঁশিয়ার হয়ে চলবে।

 দু বছর পরে দিবাকর যখন খালাস হয়ে ফিরে এল তখন তার বউ আর মেয়ে বেঁচে নেই, সে বন্ধনহীন দায়িত্বহীন মুক্তপুরুষ। নিজের নামটা বদলে সে রজনীকান্ত হল এবং অতি সতর্ক কঠোর সাধনার ফলে অল্প কালের মধ্যে মাৎস্য সমাজের শীর্ষে উঠল। এখন সে একজন রাঘব বোয়াল, সামান্য লোকের মত তাকে ‘সে’ বলা চলবে না, ‘তিনি’ বলতে হবে।

 শ্রীরজনীকান্ত চৌধুরী এখন স্বহস্তে কোনও তুচ্ছ কর্ম করেন না, চুরি ডাকাতি তবিল ভাঙা ইত্যদির সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ নেই। গুণ্ডা বললে তাঁকে ছোট করা হয়। রাজার উপরে যেমন অধিরাজ, কর্তার উপরে যেমন অধিকর্তা, রজনীকান্ত তেমনি অধিগুণ্ডা, অর্থাৎ গুণ্ডাদের উপদেষ্টা নিয়ন্তা প্রতিপালক ও রক্ষক। ভূতপূর্ব গুরু গণপতি এখন তাঁর প্রাইভেট সেক্রেটারী। এক কালে যাঁরা মরুব্বী ছিলেন তাঁরাই এখন রজনীকান্তের সাহায্যের ভিখারী। তাঁর কৃপা না হলে ইলেকশনে জয়লাভ হয় না, উচুদরের দুষ্কর্ম নির্বিঘ্নে করা