—বেশ, গোপালীর মাকে দেড় হাজার টাকা দেব। তের ওপর তার মর্মান্তিক রাগ থাকার কথা, তবে খুব কষ্টে আছে, টাকাটা নিতে আপত্তি করবে না। এটা ভালই করলি ভূষণ, এতে তোর পাপ অনেকটা ক্ষয় হয়ে যাবে। তার পর আর কাকে কি দিতে চাস?
—বাকী সবটা তুমি নিও।
আবার হাউ হাউ করে কেঁদে সাগর বলল, তোর টাকা আমি কোন প্রাণে নেব রে? সৎপাত্রে দান কর, পরকালে তোর ভাল হবে।
—তোমার চাইতে সৎপাত্র পাব কোথা। আমার বাবা মা ভাই বোন কেউ নেই, শুধু তুমিই আছ। আচ্ছা সাগর কাকা, মরবার পরে যমদূতে আমাকে সোজা নরকে নিয়ে যাবে তো?
—তা আমার মনে হয় না। আমাদের হাকিমদের চাইতে যমরাজ ঢের বেশী বোঝেন। অন্যায় সইতে না পেরে রাগের মাথায় একটা পাপ করে ফেলেছিস, তার সাজাও মাথা পেতে নিচ্ছিস, আপীল পর্যন্ত করতে চাস না। তোর পাপ বোধ হয় এখানেই খণ্ডে গেল। আদিত্য উকিল বাবু কি বলেছে জানিস? ইংরেজ বিদেয় হয়েছে, কিন্তু নিজেদের ফৌজদারী আইন আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে গেছে। ওদের দেশে নব্নের অপরাধটা কিছুই নয়, তার জন্যে কেউ খেপে গিয়ে মানুষ খুন করে না, বড় জোর খেসারত দাবি করে আর তালাকের দরখাস্ত করে। ওদের বিচারে নব্নের চাইতে তোর অপরাধ ঢের বেশী। কিন্তু যদি সেকালের হিঁদু রাজা কি মুসলমান বাদশার আমল হত তবে তুই বেকসুর খালাস পেতিস। দেখ ভূষণ, আমার মনে হয় তোর স্বর্গে ঠাঁই হবে না বটে, কিন্তু নরক ভোগ থেকে তুই রেহাই পারি।
—স্বর্গেও নয় নরকেও নয়, তবে ঠাঁই হবে কোথায়?
—তুই আবার জন্মাবি।