পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৯১

জনশূন্য গৃহছাদে আকাশের তলে;
কী করিতে খেলা, কী বিচিত্র কথা ব’লে
ভুলাতে আমারে, স্বপ্নসম চমৎকার
অর্থহীন, সত্য মিথ্যা তুমি জানো তার।
দুটি কর্ণে দুলিত মুকুতা, দুটি করে
সোনার বলয়, দুটি কপোলের ’পরে
খেলিত অলক, দুটি স্বচ্ছ নেত্র হতে
কাঁপিত আলোক, নির্মল নির্ঝর স্রোতে
চূর্ণরশ্মিসম। দোঁহে দোঁহা ভালো ক’রে
চিনিবার আগে নিশ্চিন্ত বিশ্বাসভরে
খেলাধুলা ছুটাছুটি দু-জনে সতত,
কথাবার্তা বেশবাস বিথান বিতত।
তারপরে একদিন—কী জানি সে কবে—
জীবনের বনে, যৌবন-বসন্তে যবে
প্রথম মলয় বায়ু ফেলেছে নিশ্বাস,
মুকুলিয়া উঠিতেছে শত নব আশ,
সহসা চকিত হয়ে আপন সংগীতে
চমকিয়া হেরিলাম—খেলাক্ষেত্র হতে
কখন অন্তর-লক্ষ্মী এসেছ অন্তরে
আপনার অন্তঃপুরে গৌরবের ভরে
বসি’ আছ মহিষীর মতো। কে তোমারে
এনেছিল বরণ করিয়া। পুরদ্বারে
কে দিয়াছে হুলুধ্বনি। ভরিয়া অঞ্চল
কে করেছে বরিষন নব পুষ্পদল
তোমার আনম্রশিরে আনন্দে আদরে।
সুন্দর সাহানা রাগে বংশীর সুস্বরে
কী উৎসব হয়েছিল আমার জগতে,
যেদিন প্রথম তুমি পুষ্পফুল্লপথে