পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
চয়নিকা

সমুখে রাজারে দেখি’ তুলি’ নিল ঘাড়ে,
ঝুলায়ে বসায়ে দিল উচ্চ এক দাঁড়ে।
নিচেতে দাঁড়ায়ে এক বুড়ি থুড়‍্ থুড়ি,
হাসিয়া পায়ের তলে দেয় সুড়‍্সুড়ি।
রাজা বলে “কী আপদ।” কেহ নাহি ছাড়ে,
পা-দুটা তুলিতে চাহে, তুলিতে না পারে।
পাখির মতন রাজা করে ঝট্‌পট্—
বেদে কানে কানে বলে—“হিং টিং ছট্‌।”
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান্।

হবুপুর রাজ্যে আজ দিন ছয় সাত
চোখে কারো নিদ্রা নাই পেটে নাই ভাত।
শীর্ণ গালে হাত দিয়ে নত করি’ শির
রাজাসুদ্ধ বালবৃদ্ধ ভেবেই অস্থির।
ছেলেরা ভুলেছে খেলা, পণ্ডিতেরা পাঠ,
মেয়েরা করেছে চুপ—এতই বিভ্রাট।
সারি সারি বসে গেছে কথা নাই মুখে,
চিন্তা যত ভারি হয় মাথা পড়ে ঝুঁকে।
ভূঁইফোড়া তত্ত্ব যেন ভূমিতলে খোঁজে,
সবে যেন বসে গেছে নিরাকার ভোজে।
মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া উৎকট
হঠাৎ ফুকারি’ উঠে—"হিং টিং ছট্‌।”
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।

চারিদিক হতে এল পণ্ডিতের দল,
অযোধ্যা কনোজ কাঞ্চী মগধ কৌশল;