আর এ দেশে ধনবলে ও পদবলেই রাজপুরুষদিগের প্রসাদলাভ করিতে পারা যায়। আজ লোকে বলে, সুরেন্দ্রনাথ লক্ষপতি হইয়াছেন। কিন্তু তাঁর কর্ম্মজীবনের প্রারম্ভসময়ে সুরেন্দ্রনাথের এ ধনপরিবাদ ছিল না। গোখেলেকে রাণাডে নিজের হাতে ধরিয়া বাড়াইয়া দিয়াছিলেন। বাংলার তদানীন্তন লোকনায়কগণের মধ্যে একজনও এরূপভাবে সুরেন্দ্রনাথকে রাষ্ট্রীয় কর্ম্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করিবার চেষ্টা করেন নাই। বাংলার ধনী ও পদস্থ লোকেরা আজ সুরেন্দ্রনাথের সাহায্য ছাড়া কোনো স্বাদেশিক অনুষ্ঠানে ব্রতী হইতে সাহস পান না। কিন্তু ইঁহাদের জ্যেষ্ঠেরা একদিন রাজদ্বারে লাঞ্ছিত সুরেন্দ্রনাথকে অস্পৃশ্য মনে করিয়া, তাঁহা হইতে দূরে থাকিতেন। বহুদিন পর্য্যন্ত রাজ-প্রসাদলোলুপ বৃটিশ ইণ্ডিয়ান্ এসোসিয়েশনের সভ্যগণ রাষ্ট্রীয় আন্দোলন-আলোচনায় সুরেন্দ্রনাথের সঙ্গে এক মঞ্চে উপবেশন করিতেও শঙ্কিত হইতেন। আজ সুরেন্দ্রনাথ ইংরেজরাজপুরুষদিগের দ্বারাও কিয়ৎপরিমাণে সম্বর্দ্ধিত হইতেছেন। কিন্তু একদিন তিনি এই রাজকর্ম্মচারী সম্প্রদায় নিকট লাঞ্ছিত হইয়া রাজকর্ম্ম হইতে অপসারিত হইয়াছিলেন। আর বহুদিন পর্য্যন্ত সে লাঞ্ছনার কথা এ দেশের ইংরেজরাজপুরুষেরা বিস্মৃত হন নাই। প্রত্যুত যতই সুরেন্দ্রনাথ রাষ্ট্রীয় আন্দোলন-আলোচনায় দেশের জনশক্তিকে প্রবুদ্ধ করিয়া, আপনি সেই শক্তি সাহায্যে শক্তিশালী হইয়া উঠিতেছিলেন, ততই তাঁহারা সেই প্রাচীন লাঞ্ছনার স্মৃতিকে প্রাণপণে জাগাইয়া রাখিবার জন্য চেষ্টা করিয়াছিলেন, ইহাও সকলেই জানেন। সেই রাজপুরুষেরাই, আজিকার অবস্থাধীনে, আপদ-বিপদে, প্রতিপদেই দেশের প্রজামতের পোষকতা লাভের লোভে, সুরেন্দ্রনাথের পরামর্শ গ্রহণ করিতেছেন। যে কন্গ্রেসের কাজকর্ম আজ সুরেন্দ্রনাথকে ছাড়িয়া কিছুতেই চলে না ও চলিতে পারে না; একদিন, কন্গ্রেসের
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুরেন্দ্রনাথ
৫