আজিকালি সর্ব্বস্বান্ত হইয়া যে বিদেশীয় বিদ্যা—অর্জ্জনের চেষ্টা করিতেছি, তাহা অনেক স্থলেই আমাদের ভৃত্য না হইয়া, আমাদের প্রভু হইয়াই বসিতেছে। আমরা অনেকেই এই অভিনব বিদ্যাকে নিজেদের কর্ম্মে নিয়োগ করিতে পারিতেছি না; প্রত্যুত এই বিদ্যাই আমাদিগকে ভয়াবহ পর-ধর্ম্মে নিয়োগ করিতেছে। মানুষের শিক্ষা ও সাধনা তাহার আত্মজ্ঞানেরই স্ফুরণ করিবে; ইহাতেই শিক্ষাদীক্ষার স্বার্থকতা লাভ হয়। কিন্তু বর্ত্তমান বিদেশীয় শিক্ষা ও সাধনা আমাদের আত্মজ্ঞানের স্ফুরণ না করিয়া, অনেক সময় কেবল আত্মবিস্মৃতিই জন্মাইয়া দেয়। এই বিদেশী বিদ্যার বলে আত্মলাভ করা দূরে থাক্, অনেক সময় আমরা আত্মবিক্রয় করিয়াই বসি। এইরূপ আত্মবিস্মৃতি ও আত্মবিক্রয় আমাদের ইংরেজিশিক্ষিত সম্প্রদায়ের সাধারণ ধর্ম্ম হইয়া গিয়াছে। সংস্কারক ও সংস্করণ-বিরোধী, উভয় দলেরই মধ্যে ইহা দেখা যায়। এক শ্রেণীর সমাজ ও ধর্ম্মসংস্কারক সর্ব্বজনসমক্ষে, স্পর্দ্ধাসহকারে, নিল্লর্জ্জভাবে, যেমন এই বিদেশীয় সভ্যতা ও সাধনাকে আলিঙ্গন করিবার জন্য বাহু প্রসারিত করিয়া রহিয়াছেন; যাঁহারা এই প্রকাশ্য প্রয়াসের প্রতিরোধ করিতে বদ্ধপরিকর হইয়াছেন, তাঁহারাও গোপনে গোপনে সেই বিজাতীয় ভাবকেই অজ্ঞাতসারে প্রাণ মধ্যে বরণ করিয়া তুলিতেছেন। ভগবানকে যেমন মিত্রভাবে ভজনা করিয়াও পাওয়া যায়, শত্রুভাবে সাধন করিয়াও পাওয়া যায়, আর শাস্ত্রে বলে, শত্রুভাবে সাধন করিলে যত সত্ত্বর সিদ্ধিলাভ হয়, মিত্রভাবের ভজনার তত সত্ত্বর হয় না; —সেইরূপ কোনো বিদেশীয় সভ্যতা-সাধনাকেও মিত্রভাবে ও শত্রুভাবে, উভয় ভাবেই পাওয়া যায়। আমাদের ধর্ম্ম ও সমাজ-সংস্কারকেরা মিত্রভাবে য়ুরোপের ভজনা করিতেছেন। সংস্করণ-বিরোধী “পুনরুত্থানকারিগণ” শত্রুভাবে তার সাধনা করিতেছেন। আর কার্যতঃ উভয় পক্ষই সমভাবে তাহার দ্বারা অভিভূত
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১০০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীযুক্ত গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
৯৫