বিভিন্ন সম্বন্ধ ও সর্ব্ববিধ বিধিব্যবস্থা এই লক্ষ্যটীর সন্ধানেই চলে। জনসমাজেরও সমষ্টিভাবে একটা গতি, একটা ঐতিহাসিক বিবর্ত্তন-চেষ্টা, একটা নিয়ম আছে, ইহা সকলেই স্বীকার করেন। কিন্তু গতি আছে, তথাপি নির্দ্দিষ্ট গস্তব্য নাই; বিধান আছে, তথাপি কোনো স্থির লক্ষ্য নাই; নিয়ম আছে, তথাপি সে নিয়ম কোন কিছুই স্থিরভাবে আয়ত্ত, প্রকাশিত বা প্রতিষ্ঠিত করিতে চাহে না,—ইহা কুত্রাপি জীবধর্ম্ম বলিয়া গণ্য হয় না। এরূপ অসঙ্গতি বুদ্ধিতে আসে না, কল্পনা করাও অসম্ভব। কিন্তু জনসমাজকে কেবল অর্গেনিজম্ বলিলেই যথেষ্ট বলা হয় না। জনসমাজে শুদ্ধ জীবত্ব আরোপ করিয়াই, তার প্রকৃতি ও গতির সম্যক্ অর্থ প্রকাশ করা যায় না। জনসমাজকে, এই জন্য, কেবল অর্গেনিজম্ না বলিয়া বিইংই (Being) বলিতে হয়। ইতালীয় মনীষী মহামতি ম্যাট্সিনী মানবসমাজকে এই বিইং উপাধি প্রদান করিয়াছেন। য়ুরোপীয়দের মধ্যে আধুনিক কালে, বোধ হয়, ম্যাট্সিনীই মানবসমাজের মূল প্রকৃতিটী অতি পরিষ্কার রূপে ধরিয়াছিলেন। Humanity is a Being—-আধুনিক যুগে ম্যাটসিনীই প্রথমে অকুতোভয়ে এ কথাটা বলিয়াছেন। আর বিইং (Being) বস্তু অচেতন নহে, সচেতন। তাহা স্বপ্রকাশ ও স্বপ্রতিষ্ঠ। তার আত্মজ্ঞানই তার গতির কারণ ও স্থিতির ভূমি হইয়া আছে। পাশ্চাত্যেরা যাহাকে বিইং (Being) বলেন, হিন্দু তাহাকে আত্মা বলেন। আমরা যাহাকে “আমি” বলি, যাহাকে অপর মানুষে তুমি বা তিনি বলে, এই অহং-প্রত্যয়বাচক বস্তুই আত্মবস্তু। তাহাই স্বপ্রকাশ ও স্বপ্রতিষ্ঠ। এ বস্তু আপনি আপনার গতি-হেতু ও স্থিতি-ভূমি। হিন্দুর শাস্ত্রে, জীবান্তর্য্যামী এই আত্মবস্তুকেই নারায়ণ বলিয়াছেন। “জীবহৃদে জলে বসে সেই নারায়ণ।” এই নারায়ণই ব্যষ্টিভাবে জীরান্তর্য্যামী—পরমাত্মা। আর এই নারায়ণই, সমষ্টিভাবে,
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১১০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীযুক্ত গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
১০৫