সত্য বলেন না। সুতরাং এ সকল ক্ষণস্থায়ী সম্বন্ধের অতীত হইবার চেষ্টা সকল সাধনেই আছে। তবে মায়াবাদী এ সকলের পশ্চাতে কোনো স্থায়ী রস প্রত্যক্ষ করেন না। আর যাঁরা মায়াবাদী নহেন, তাঁরা সংসারের সর্ব্ববিধ অনিত্য সম্বন্ধের মধ্যেও কতকগুলি স্থায়ী রসের প্রতিষ্ঠা করেন, এবং এই সকল রসকে রস—স্বরূপ যে পূর্ণব্রহ্ম তাঁহারই নিখিলরসামৃতসিন্ধুর উপরিস্থ তরঙ্গভঙ্গ বলিয়া গ্রহণ করেন। এ সংসারে পিতাপুত্রের যে কায়িক সম্বন্ধ তাহা প্রত্যক্ষতঃই অনিত্য। প্রাকৃতজনে যে বাৎসল্যরস আস্বাদন করে তাহাও অস্থায়ী, সন্তানের জন্মের সঙ্গে তাহার উৎপত্তি হয়, আর সস্তান গত হইবার পরে সচরাচর তাহা ক্ষীণ হইয়া, দীর্ঘকাল পরে, লুপ্তপ্রায় হয়। কিন্তু এই সম্বন্ধের পশ্চাতে একটা স্থায়ী বাৎসল্যরস আছে। এই স্থায়ী রসই, দেশকালাধীন এই সংসারে লৌকিক পিতামাতার সঙ্গে পুত্রকন্যার যে সম্বন্ধ, তাহারই মধ্য দিয়া আত্মপ্রকাশ করিতেছে। এ রস ভগবৎ-প্রকৃতির অন্তর্গত, সুতরাং পারমার্থিক ও নিতা। সংসারের বিভিন্ন সম্বন্ধ এই স্থায়ী ভাগবতীলীলা-রসকে আশ্রয় করিয়া প্রকাশিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সকল সম্বন্ধের অন্তরালে, শাস্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর এই পঞ্চ স্থায়ী রস বিদ্যমান রহিয়াছে। আর এই জন্য, এই পঞ্চ স্থায়ী রস বিদ্যমান রহিয়াছে। আর এই জন্য, এই পঞ্চ স্থায়ী রসের প্রকাশ ও আলম্বন বলিয়া, সংসারেরও একটা পারমার্থিক সত্য ও মাহাত্ম্য, মর্য্যাদা ও মূল্য আছে। জীব ও সংসার অত্যন্ত অনিত্য নহে, অত্যন্ত নিত্যও নহে; কিন্তু নিত্যানিত্যমিশ্রিত। ইহাকে পরিণামী নিত্য বলা যায়। আর পরিণামী নিত্য বলিয়াই, এই সংসার ভাগবতী-লীলার আশ্রয় হইয়া আছে। এই লীলা— প্রয়োজনেই মনুষ্যসমাজ মহাবিষ্ণু বা নারায়ণের কায়ব্যূহ হইয়াছে। কিন্তু ব্রক্ষ্মস্বরূপের আত্মচরিতার্থতার জন্যই, সেই অদ্বৈত-স্বরূপেরই মধ্যে, যে একটা দ্বৈত-সম্বদ্ধ প্রতিষ্ঠিত হয়, যে দ্বৈত-সম্বন্ধ বা ভেদাভেদকে অবলম্বন
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১২২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীযুক্ত গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
১১৭