সত্য; কিন্তু এ সকল উদ্ধৃত উপদেশের প্রামাণ্যমর্য্যাদা শ্রুতি-প্রতিষ্ঠিত নহে, মহর্ষির আপনার স্বানুভূতি-প্রতিষ্ঠিত মাত্র। উপনিষদের যে সকল শ্রুতি মহর্ষির নিকটে সত্য বলিয়া বোধ হইয়াছে, তিনি সেগুলিকেই বাছিয়া বাছিয়া আপনার ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রন্থে নিবদ্ধ করেন;—ঋষিরা কি সত্য বলিয়া দেখিয়াছিলেন বা জানিয়াছিলেন, তাহার সন্ধান তিনি করেন নাই। কোনও শ্রুতির বা উত্তরার্দ্ধ, কোনওটীর বা অপরার্দ্ধ, যার যতটুকু তাঁর নিজের মনোমত পাইয়াছেন, তাহাই কাটিয়া ছাঁটিয়া আপনার ব্রাহ্মধর্ম্ম, গ্রন্থে গাঁথিয়া দিয়াছেন। অতএব মহর্ষির ব্রাহ্মধর্ম্মগ্রন্থে বিস্তর শ্রুতি উদ্ধৃত হইলেও, এ গ্রন্থ তাঁর নিজের। ইহার মতামত তাঁর, প্রাচীন ঋষিদিগের নহে। সংস্কৃত শ্লোক উদ্ধার না করিয়া কেবল বাঙ্গলা ভাষায় এ সকল মতামত লিপিবদ্ধ করিলেও, তার যতটুকু মর্য্যাদা থাকিত, উপনিষদের বুক্নী দেওয়াতে ইহা তদপেক্ষা বেশী মর্য্যাদা লাভ করে নাই। য়ুরোপীয় যুক্তিবাদিগণের অন্যতম উপদেষ্টা মন্কিওর ডি কন্ওয়ের (Moncure D. Conway) সঙ্কলিত শাস্ত্রসংগ্রহের বা Sacred Anthology’র যে পরিমাণ ও যে জাতীয় শাস্ত্রপ্রামাণ্য ও শাস্ত্রমর্য্যাদা থাকা সম্ভব, মহর্ষির সঙ্কলিত ব্রাহ্মধর্ম্মগ্রন্থের সে পরিমাণ ও সেই জাতীয় শাস্ত্রপ্রামাণ্য এবং শাস্ত্রমর্য্যাদাই আছে বা থাকিতে পারে। তার বেশী নাই।
কিন্তু রাজা রামমোহন যে সমীচিন মীমাংসার সাহায্যে স্বদেশের পুরাতন সাধনার উপরেই নূতন যুগের নূতন সাধনাকে গড়িয়া তুলিতে চাহিয়াছিলেন, সে মীমাংসা-প্রতিষ্ঠার অনুকূল কাল তখনও উপস্থিত হয় নাই। লোকের মন তখনও তাহা গ্রহণ করিবার জন্য প্রস্তুত হয় নাই। ফলতঃ যে বিবেক জাগ্রত হইলে লোকের মনে পুরাতন ও প্রচলিতের প্রাণহীনতার জ্ঞান জন্মিয়া থাকে, এদেশে তখনও সে বিবেক জাগে নাই। শাস্ত্র, সন্দেহ, বিচার, সমন্বয়, সঙ্গতি—ইহাই মীমাংসার ক্রম। যতক্ষণ