সমাজের মূল প্রকৃতি যে কি, এ জ্ঞান ইঁহাদের কাহারই ভাল করিয়া পরিস্ফুট হয় নাই। কি কেশবচন্দ্র, কি অল্কট্ ব্লাভ্যাট্স্কী, কি শশধর তর্কচূড়ামণি প্রভৃতি,—ইঁহাদের কেহই দেশের লোক-প্রকৃতি, সমাজপ্রকৃতি কিংবা পুরাগত সভ্যতা ও সাধনার প্রকৃতির উপরে, অথবা আমাদের প্রাচীন ঐতিহাসিক বিবর্ত্তন-প্রণালীর সঙ্গে মিলাইয়া, নিজেদের মীমাংসার প্রতিষ্ঠা করিতে পারেন নাই। ফলতঃ তাঁহারা যে পথে আমাদের বর্ত্তমান যুগসমস্যার মীমাংসা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, তাহাকে মীমাংসা বলা যায় কি না, সন্দেহ। মীমাংসার প্রথমে কতকগুলি প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত মত, সিদ্ধান্ত বা সংস্কার বা প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান থাকে। কোনও কারণে এ সকলে সত্য বা কল্যাণকারিতা সম্বন্ধে লোকের মনে সন্দেহের উদয় হয়। কোনও নূতন মত বা সিদ্ধান্ত, ভাব বা আদর্শকে আশ্রয় করিয়া, তারই প্রেরণায় এ সন্দেহের উৎপত্তি হয়। এই সন্দেহ নিরসনের জন্য বিচারের বা যথাযোগ্য-প্রমাণপ্রতিষ্ঠা-সমালোচনার বা criticismএর আবশ্যক হয়। এই বিচার ক্রমে নূতন সিদ্ধান্তের সাহায্যে প্রাচীনের সঙ্গে নূতনের বিরোধ নিষ্পত্তির পথ দেখাইয়া দেয়। এই পথে যাইয়াই পরিণামে চূড়ান্ত মীমাংসার প্রতিষ্ঠা হয়। এরূপ মীমাংসার জন্য বাদী প্রতিবাদী উভয় পক্ষেরই সম্যক জ্ঞানলাভ অত্যাবশ্যক। কিন্তু কি কেশবচন্দ্র, কি থিওসফী সমাজের নেতৃবর্গ, কি তর্কচূড়ামণি প্রভৃতি তথাকথিত হিন্দু পুনরুত্থানকারিগণ, ইঁহাদের কেহই এ জ্ঞানলাভ করেন নাই। কেশবচন্দ্রের স্বদেশের মূল প্রকৃতির এবং বিশেষতঃ স্বজাতির ঐতিহাসিক বিবর্ত্তনের কোনও বিশেষ জ্ঞান ছিল না। থাকিলে তিনি খৃষ্টীয়ানী সিদ্ধান্ত ও খৃষ্টীয়ান্ ইতিহাসের দৃষ্টান্ত আশ্রয় করিয়া, বর্ত্তমান যুগসমস্যার মীমাংসা করিতে যাইতেন না। হিন্দু যুগে যুগে, স্বানুভূতি ও শাস্ত্রের মধ্যে যে সামঞ্জস্য
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৮৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী ও ব্রাহ্মসমাজ
১৮১