পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুরেন্দ্রনাথ
১৭

হাত এড়াইতে পারেন নাই। বরং সময়ে সময়ে তিনি এতটাই লোকনিন্দার ভাগী হইয়াছেন যে, অন্য লোকে সেই অপবাদ মাথায় লইয়া আবার কখনও লোক নেতৃত্বের দাবী করিতে সাহস পাইত কি না সন্দেহ। রাজকর্ম্ম হইতে অপসৃত হইয়া, নিতান্ত বিপন্ন হইয়া পড়িলে যে বিদ্যাসাগর তাঁহাকে অযাচিত আশ্রয়দান করিয়াছিলেন, সুরেন্দ্রনাথ যখন সেই বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটন কালেজের প্রতিদ্বন্দ্বী সিটি কালেজে কর্ম্ম গ্রহণ করেন এবং অল্পদিন মধ্যে আপনি সেই মেট্রোপলিটন কালেজের আর একটী প্রবল প্রতিদ্বন্দী, রিপণ কালেজের, প্রতিষ্ঠা করেন তখন তাঁহার কুযশে বাংলার শিক্ষিত সমাজ মুখরিত হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ নীরবে সেই নিন্দাবাদকে উপেক্ষা করিয়া অল্পদিন মধ্যেই জনসাধারণের চিত্তে আপনার পূর্ব্বতন প্রভাব পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করেন। ইহার কিছু দিন পরে তাঁহার রিপণ কালেজের আইন বিভাগের অবৈধ আচার আচরণ লইয়া, একটা বিষম গোল বাধিয়া উঠে এবং এই কালেজ একেবারে উঠিয়া যাইবার আশঙ্কা পর্য্যন্ত উপস্থিত হয়। আর যে ভাবে তখন সুরেন্দ্রনাথ এই আসন্ন বিপদ হইতে আপনার কালেজটা রক্ষা করেন, তাহা লইয়াও শিক্ষিত বঙ্গসমাজের সর্ব্বত্র তাঁহার যে কুযশ রটনা হয়, সেরূপ কুযশকে ঠেলিয়া অন্য কোন লোকনায়ক স্বাদেশিক কর্ম্মক্ষেত্রে অটল ভাবে দাঁড়াইয়া থাকিতে পারিতেন কি না সন্দেহ। আর শোকে সংযম, বিপদে ধৈর্য্য, নিন্দা-অপবাদে উপেক্ষা,প্রত্যক্ষ নিষ্ফলতার মধ্যেও অসাধারণ কর্ম্মোদ্যম,এ সকলই সুরেন্দ্রনাথের পূর্ব্বজন্মসিদ্ধ যোগশক্তির প্রমাণ প্রদান করে। সুরেন্দ্রনাথের জীবনের কৃতিত্বের পশ্চাতে এই যোগশক্তিকে প্রত্যক্ষ না করিলে তাঁহার প্রকৃত মর্ম্ম ও মূল্য বোঝা অসম্ভব হইবে। সুরেন্দ্রনাথের এই সংযম, এই উপেক্ষা ও এই কর্ম্মোদ্যম, এ সকল উচ্চতম রাজসিকতারই লক্ষণ। এ সকলে সুরেন্দ্রনাথের অসাধারণ পুরুষকারেরই প্রমাণ পরিচয় প্রদান করে।