পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুরেন্দ্রনাথ
১৯

শয় অলোকসামান্য, কিম্বা তাঁহার পাণ্ডিত্যের গভীরতা বা প্রসার যে খুবই বেশী, তাহা নহে। তাঁহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মনীষী তাঁর পূর্ব্বেও অনেক এই বাংলাদেশে জন্মিয়াছেন; তাঁর জীবনকালেও অনেক ছিলেন এবং আছেন। কৃষ্ণদাসের মত রাষ্ট্রীয় বুদ্ধি কিম্বা রাজেন্দ্রলালের মত পাণ্ডিত্য সুরেন্দ্রনাথের কখনই ছিল না। এমন কি কোনো কোনো দিক্ দিয়া শিশিরকুমারের প্রতিভাও সুরেন্দ্রনাথের প্রতিভা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিল বলিয়াই মনে হয়। অথচ সুরেন্দ্রনাথ আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে অক্ষয় কীর্ত্তি অর্জ্জন করিয়াছেন, ইঁহাদের কেহই সে কীর্ত্তি অর্জ্জন করিতে সক্ষম হন নাই। ইহার প্রধান কারণ এই যে সুরেন্দ্রনাথের প্রতিভা ও পুরুষকারের সঙ্গে দৈবের যে অনুকূল যোগাযোগ স্থাপিত হইয়াছে, এ দেশের তাঁর সমসাময়িক কিম্বা অব্যবহিত পূর্ব্ববর্ত্তী অন্য কোনো লোকনায়কগণের ভাগ্যে তাহা ঘটে নাই। কৃষ্ণদাস, রাজেন্দ্রলাল, শিশিরকুমার আপন আপন শক্তি অনুসারে সকলেই স্বদেশের সেবা করিয়া গিয়াছেন। ইঁহাদের সাধনবলে বাংলার আধুনিক রাষ্ট্রীয়জীবন অনেক পরিপুষ্টিলাভ করিয়াছে। কিন্তু সত্য কথা বলিতে গেলে ভারতের ভবিষ্যৎ ইতিহাসে ইহাঁদের কাহারো নাম থাকিবে কি না সন্দেহ। পণ্ডিতসমাজে অসাধারণ প্রতিভাশালী প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌ বলিয়া অনেক দিন রাজেন্দ্রলালের খ্যাতি থাকিবে। বাংলার আধুনিক রাষ্ট্রীয়জীবনের ক্রমবিকাশের ইতিহাসে কৃষ্ণদাসের এবং শিশিরকুমারের নামও কতকটা থাকিবারই কথা। ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতের দেশীয় সংবাদপত্রের ইতিহাসেও এই দুই বাংলা সংবাদপত্র সম্পাদকের নাম কতকটা থাকিয়া যাইবে। কারণ “হিন্দু-প্যাট্রিয়ট” ও “অমৃত-বাজার”কে উপেক্ষা করিয়া এদেশের আধুনিক সংবাদপত্রের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নহে। কিন্তু আধুনিক ভারতের ইংরেজী-শিক্ষাপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের জীবনে ও