পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
চরিত-কথা

তার শব্দশক্তির পশ্চাতে সর্ব্বদা কোনও সজীব বস্তুতন্ত্রতা বিদ্যমান থাকে না এবং এই কারণেই তাহার উদ্দীপনাও স্থায়ী হয় না। কিন্তু এ সকল সত্ত্বেও প্রধানতঃ আপনার বাগ্মিতাবলেই সুরেন্দ্রনাথ আধুনিক ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় চিন্তায় ও কর্ম্মজীবনে যে স্থায়ী প্রতিপত্তিলাভ করিয়াছেন, তাঁহার পুরুষকারই ইহার একমাত্র হেতু নহে, ইহার অন্তরালে দৈবপ্রভাবও প্রত্যক্ষ হয়।

 দেশকালের যথাযোগ্য যোগাযোগ ব্যতীত এ জগতে কি সাংসারিক কি পারমার্থিক কোনো প্রকারের সাধনাতেই লোকে সিদ্ধি লাভ করিতে পারে না। আর দৈবকৃপায় সুরেন্দ্রনাথের কর্ম্মজীবনে এই যোগাযোগ ঘটিয়াছিল বলিয়াই তিনি এতটা সফলতা লাভ করিতে পারিয়াছেন। সুরেন্দ্রনাথ আজি পর্য্যন্তও তাঁর স্বদেশের প্রাণবস্তুর সংস্পর্শ লাভ করিতে পারিয়াছেন কি না সন্দেহ। তাঁর কর্ম্মজীবনের প্রথমে যে তিনি এই প্রাণস্রোতের একান্ত বাহিরে পড়িয়াছিলেন, ইহা অস্বীকার করা অসম্ভব। কিন্তু তাঁর সমসামরিক ইংরেজিশিক্ষিত স্বদেশবাসিগণের সকলেরই এই অবস্থা ছিল। সেকালে ইংরেজিশিক্ষিত বাঙ্গালীগণ ইংরেজিতেই কথাবার্ত্তা ও পত্র ব্যবহার করিতেন, ইংরেজি ধরণেই চিন্তা করিতেন, ইংরেজি সাহিত্যের অলঙ্কারাদি অবলম্বনেই নিজেদের ভাবাঙ্গসাধনের চেষ্টা করিতেন। ইংরেজসমাজের আদর্শে নিজেদের সমাজকে এবং ইংলণ্ডের রাষ্ট্রতন্ত্রের অনুযায়ী আপনাদের রাষ্ট্রীয় জীবনকে গড়িয়া তুলিবার জন্য ইঁহারা সকলেই স্বল্পবিস্তর লালায়িত ছিলেন। এই অবস্থায় যে সুরেন্দ্রনাথের ইংরেজি-শব্দ-সম্পদ-পুষ্ট, ইংরেজি-অলঙ্কার-ভূষিত, ইংরেজি ভাবে অনুপ্রাণিত, য়ুরোপীয় ইতিহাসের দৃষ্টান্তে উদ্দীপিত বাগ্মিতা তাঁহার স্বদেশের ইংরেজিশিক্ষিত সম্প্রদায়ের প্রাণকে মাতাইয়া তুলিয়াছিল, ইহাই কিছুই বিচিত্র নহে।