পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৪
চরিত-কথা

আবশ্যক হয়। এই বহুসংখ্যক নৌ-কর্ম্মচারী ও নাবিকদিগের পরিচালনার জন্য প্রত্যেকের কর্ম্মাকম্মের একটা নির্দ্দিষ্ট ব্যবস্থা করা ও অপরিহার্য্য হইয়া উঠে। এই সকল ব্যবস্থার উপরেই যখন এত আরোহীর সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও জীবনমরণ নির্ভর করে, তখন এসকলের বিন্দুমাত্র বিপর্য্যয় যাহাতে না ঘটে, তাহার জন্য কঠোর শাসনেরও প্রয়োজন হয়। এক এক খানি সমুদ্রগামী জাহাজ এক একটা ক্ষুদ্র রাজ্যের মত। কাপ্তান সেই রাজ্যের রাজা। জাহাজের কর্ম্মচারী এবং আরোহী সকলকেই কাপ্তানের আজ্ঞাধীন হইয়া চলিতে হয়; না চলিলে জাহাজপরিচালনা অসম্ভব এবং এত লোকের প্রাণরক্ষা অসাধা হইয়া পড়ে। সেনাশিবিরে প্রত্যেক সেনাপতির যে প্রভুত্ব ও অধিকার, সমুদ্রগামী জাহাজের কাপ্তানের সেইরূপ অধিকার ও প্রভুত্ব রহিয়াছে। এখানে নাবিক এবং আবোহী সকলেরই দণ্ডমুণ্ডের কর্ত্তা, —জাহাজের কাপ্তান। যাহারা এই সকল জাহাজে সর্ব্বদা যাতায়াত করিয়া থাকে ও এই সকল জাহাজের পরিচালনার ভার গ্রহণ করে, তাহারা সকলেই জাহাজের বিধিব্যবস্থা মানিয়া চলিতে ও কাপ্তানের আদেশ পালন করিতে অভ্যস্ত হইয়া যায়। আর এই অভ্যাসের ভিতর দিয়া তাহারা এক প্রকাবের সংযম শিক্ষাও করিযা থাকে। এই সংযমের গুণেই আসন্ন মৃত্যুর মুখেও টাইট্যানিকের দ্বিসহস্রাধিক আরোহী ও নাবিক বিন্দুমাত্র ভয়বিক্ষিপ্ত হইয়া উঠে নাই।

 এ তো গেল বিশেষ ব্যবহার ও বিশেষ বিধানের কথা। ইহার অন্তরালে আধুনিক যুরোপীয় সভ্যতার কতকগুলি সাধারণ ধর্ম্মও বিদ্যমান ছিল। এই সভ্যতা ও সাধনা, যতই কেন ভোগপ্রধান হউক না, ইহার পারমার্থিক দৃষ্টি অপেক্ষারত ক্ষীণ হইলেও, পরার্থপরতা বস্তুতঃ সামান্য নহে। বিধাতার রাজ্যে অত্যন্ত ভোগী যে সেও কখনও নিতান্ত