স্থানে নূতন খৃষ্টীয় সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হইয়া খৃষ্টীয়ান জনমণ্ডলীর ব্যক্তিত্বাভিমানকে এখানেও চাপিয়া রাখিতে লাগিল। ইহুদীয় ও গ্রীসে যেমন সমাজান্তর্গত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে একান্তভাবেই সমাজশক্তির ও রাষ্ট্রশক্তির অধীন করিয়া রাখিয়াছিল, প্রথম যুগের খৃষ্টীয় সাধনাও সেইরূপই খৃষ্টীয়ান জনসাধারণকে একান্তভাবেই Churchএর বা খৃষ্টীয় সঙ্ঘের অধীন করিয়া রাখে। প্রভুশক্তির রূপান্তর ও নামান্তর হইল মাত্র, কিন্তু জনমণ্ডলীর ঐকান্তিক পরাধীনতার কোনই পরিবর্ত্তন হইল না। এইরূপে যেমন প্রাচীন গ্রীক ও রোমক তন্ত্রে, সেইরূপ নূতন খৃষ্টীয় তন্ত্রেও জনগণের ব্যক্তিত্ব-মর্য্যাদার প্রতিষ্ঠা হয় নাই। বহু শতাব্দ ব্যাপিয়া একদিকে পৌরহিত্য-প্রধান রোমক খৃষ্টীয় সঙ্ঘ ও অন্যদিকে স্বেচ্ছাচারী প্রজারঞ্জনবিমুখ খৃষ্টীয়ান ভূপতিবর্গ, উভয়ে মিলিয়া য়ুরোপীয় জনমণ্ডলীর অন্তর্বাহ্য সর্ব্বপ্রকারের স্বাধীন চেষ্টাকে একান্তভাবে অবরুদ্ধ করিয়া, তাহাদের প্রাণগত ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্বকে নিতান্ত নির্জীব করিয়া রাখিয়াছিলেন। ধর্ম্মের প্রামাণ্যবিচারে স্বাভিমতের এবং রাষ্ট্রীয়-শাসন-ব্যাপারে লোকমতের কোনই অধিকার ও মর্য্যাদা ছিল না। রোমক সঙ্ঘের প্রধান পুরোহিত বা পোপ একদিক দিয়া লোকের ধর্ম্মজীবনে আপনাকে ঈশ্বরের সাক্ষাৎ প্রতিনিধি বলিয়া প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। অন্যদিকে খৃষ্টীয়ান রাজন্যবর্গও জনগণের সাংসারিক কর্ম্মজীবনে ঐশ্বরিক মর্য্যাদার দাবী করিয়া তাহাদিগকে নিজেদের পদানত করিয়া রাখিয়াছিলেন। ষোড়শ খৃষ্টীয় শতাব্দীতে রোমান ক্যাথালিক পৌরহিত্যের অতিপ্রাকৃত প্রভুত্বের প্রতিবাদ করিয়া মার্টিন লুথার খৃষ্টীয় জগতে ধর্ম্মের প্রামাণ্যবিচারে জনগণের স্বাভিমতের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করেন। তখন হইতেই খৃষ্টীয় সমাজে স্বাধীন চিন্তার বা Free Thoughtএর উন্মেষ হইতে আরম্ভ করে। মার্টিন লুথার রোমক সঙ্ঘের অধিপতি পোপের অতিপ্রাকৃত
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/২৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
চরিত-কথা