পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
চরিত-কথা

করিয়া এই নূতন ধর্ম্ম ও সমাজসংস্কারের পথ ধরিয়া চলিয়াছিলেন, ভারতের আর কোনো প্রদেশের লোকে সেরূপ করেন নাই। আর এই সাধনবলেই আধুনিক স্বাধীনতার আদর্শ বাংলা দেশে যতটা ফুটিয়া উঠিয়াছে ভারতের আর কোথাও সেরূপ ফুটিরা উঠে নাই।

বাংলার স্বাধীনতার ও স্বদেশ-চর্য্যার আদর্শ

 ফলতঃ যে যাহাই বলুন না কেন বাংলার নিকট হইতেই যে ভারতের অপরাপর প্রদেশবাসিগণ বহুল পরিমাণে এই আধুনিক স্বাধীনতার ও স্বদেশচর্য্যার উদ্দীপনা লাভ করিয়াছেন, ইহা অস্বীকার করা যায় না। সমগ্র ভারত যখন নিদ্রিত, কেবল বাংলাই তখন জাগিয়া উঠিয়াছিল। ব্রিটিশ ভারতের অন্য কোন প্রদেশে যখন ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার সঞ্চার হয় নাই, বাঙ্গালী তখনও এই মুক্তিমন্ত্রসাধনে নিযুক্ত ছিল। আর এই জন্যই বাংলার স্বাধীনতার আদর্শের পূর্ণতা ও সজীবতা বাঙ্গালীর স্বাদেশিকতার ধর্ম্মপ্রাণতা ও একনিষ্ঠা এবং বাংলার রাষ্ট্রীয় জীবনের শক্তি ও শুদ্ধতা, এ সকল এ পর্য্যন্ত ভারতের অন্য কোন প্রদেশে দেখা যায় নাই। অন্যান্য প্রদেশের ধর্ম্মসংস্কার-চেষ্টা একদিকে নূতনকেও নিঃসঙ্কোচে আলিঙ্গন করিতে সমর্থ হয় নাই এবং অন্যদিকে পুরাতনের সনাতন প্রাণ-বস্তুকে অবলম্বন করিয়া তাহাকেও সজীব ও সময়োপযোগী করিয়া তুলিতে পারে নাই। কিন্তু নূতনের কুযুক্তি এবং পুরাতনের কুসংস্কারের মধ্যে একটা খিচুড়ী পাকাইবারই চেষ্টা করিয়াছে। সমাজ-সংস্কারচেষ্টাতেও অন্যান্য প্রদেশে এইরূপ অসঙ্গতিদোষ দেদীপ্যমান রহিয়াছে। সমাজ-সংস্কার করিতে যাইয়া বাংলা আপনার বিচার-বুদ্ধির অনুযায়ী শুদ্ধ শ্রেয়ের পথই ধরিতে চাহিয়াছে, প্রেয়ের