আত্মপ্রতিষ্ঠার রূপান্তর ও নামান্তর মাত্র। অশ্বিনীকুমারের মধ্যে কোনও দিন এই আত্মপ্রতিষ্ঠার বা এই সংগ্রামশীলতার, বা এই প্রখর রাজসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় নাই। এগুলি থাকিলে তাঁর চরিত্র এমন মোলায়েম, ও তাঁর জীবনব্রত এতটা সফল হইতে পারিত না।
অশ্বিনীকুমার প্রকাশ্যভাবে ব্রাহ্মসমাজভুক্ত না হইলেও বহুদিন পর্য্যন্ত ব্রাহ্মমতাবলম্বী ছিলেন, য়ুরোপীয় যুক্তিবাদ এবং ব্যক্তিত্বাভিমানী অনধীনতাই ব্রাহ্মমতের মূল ভিত্তি। এই দুইটী সিদ্ধান্তকে আশ্রয় করিয়াই, ব্রাহ্ম আচার্য্যগণের প্রকৃতিগত আস্তিক্যবুদ্ধি বর্ত্তমান ব্রাহ্মধর্ম্মকে গড়িয়া তুলিয়াছে। আর এই যুক্তিবাদ ও অনধীনতার আদর্শ উভয়ই ইংরেজিশিক্ষার প্রত্যক্ষ ফল। ইংরেজি শিখিয়া আমরা সকলেই এ গুলির দ্বারা একদিন স্বল্পবিস্তর অভিভূত হইয়া পড়িয়াছিলাম। অশ্বিনীকুমারও এ প্রভাবকে অতিক্রম করিতে পারেন নাই। কিন্তু বয়োবৃদ্ধি সহকারে, অন্তর্দৃষ্টি জাগিতে আরম্ভ করিলে এবং সংসারের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাইয়া সকল বিষয়ের চারিদিক অনুধাবন করিবার শক্তি জন্মিলে, চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রকেই প্রথম যৌবনের এই নিরঙ্কুশ অনধীনতা ও যুক্তিবাদের প্রভাব হইতে অল্পবিস্তর মুক্ত করিয়া দিতে থাকে। প্রথম যৌবনে আমরা নিজেদের বিচারবুদ্ধিকেই সত্যাসত্য ও ধর্ম্মাধর্ম্মের একমাত্র মাপকাঠি বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলাম। তখন বুঝি নাই যে এ পথে যাইলে বস্তুতঃ সত্যে ও মতে কোনও পার্থক্য থাকে না, আর ধর্ম্মের ও সত্যের কোনও সনাতন, সার্ব্বভৌমিক প্রতিষ্ঠাও মিলে না। আমার বিচারবুদ্ধি যদি সত্যাসত্যের একমাত্র কষ্টিপাথর হয়, তবে তোমার বিচার-বুদ্ধিই বা তাহা হইবে না কেন, ব্যক্তিত্বাভিমানী যুক্তিবাদ এ. প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারে না। এ পক্ষে য়ুরোপেও ক্রমে একটা মানসিক অরাজকতা জাগিয়া উঠিয়াছে। এই কারণেই সেখানে সমাজবন্ধন ও