পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
চরিত-কথা

আর এক মোহান্ত বা সদ্‌গুরু। কেবল অন্তরবৃত্তি বা আত্মপ্রত্যয় বা সহজজ্ঞান বা ইণ্টুইষণের দ্বারা আমরা কোনও জ্ঞানলাভ বা রসাস্বাদন করি না। অন্তরে যার ছাঁচ আত্মপ্রত্যয়রূপে রহিয়াছে, তার অনুরূপ বস্তু যতক্ষণ না বাহিরে প্রকাশিত হয়, ততক্ষণ সেই অন্তরের আত্মপ্রত্যয় জাগিয়া উঠে না। ভিতরের ঐ ছাঁচে বাহিরের বস্তু পড়িলেই আমাদের জ্ঞানলাভ হইরা থাকে। অন্তরের ঐ আত্মপ্রত্যয়কে ইংরেজিতে subjective intuitions বলে—কেবল intuitions ও বলিয়া থাকে। আর বাহিরের বস্তুকে object বলে। ইন্‌টুইষণ বা আত্মপ্রত্যয়কে forms of knowledge, আর বাহিরের বিষয়কে contents of knowledge বলে। এই ছাঁচের বা forms’ এর সঙ্গে এই contents বা বস্তুর মিলন হইরাই সর্বপ্রকারের জ্ঞান ফুটিয়া উঠে। আমাদের সদ্‌গুরুতত্ত্ব এই দার্শনিক সিদ্ধান্তের উপরে প্রতিষ্ঠিত। ভিতরে ঈশ্বরের জ্ঞান আত্মপ্রত্যয়রূপে আছে, ইহা সত্য। কিন্তু এ জ্ঞান আমাদের জ্ঞানগোচর নহে। যখন বাহিরে ঈশ্বরের ধর্ম্মসম্পন্ন কোনও বস্তুর সাক্ষাৎকার লাভ করি, তখনই কেবল আমাদের ভিতরকার ঐ ঐশ্বরজ্ঞান জাগিয়া উঠে। বাহিরে, সংসারে, পিতাকে দেখিয়াই ভগবানের পিতৃত্ব, এখানে মাতাকে দেখিয়াই তাঁহার মাতৃত্ব, এখানকার সখাসখীদের সখ্য আস্বাদন করিয়াই তাঁহার সখ্য, এখানকার মাধুর্য্যসম্ভোগ করিয়াই তাঁহার মাধুর্যের জ্ঞানলাভ করিয়া থাকি। এ সকল জ্ঞান ভিতরেরই বস্তু বটে, কিন্তু বাহিরের সংস্পর্শ-লাভ না করিলে এই ভিতরের জ্ঞান জাগে না। এইজন্য “যাহা নাই ভাণ্ডে, তাহা নাই ব্রহ্মাণ্ডে”, একদিকে যেমন এই কথা অতি সত্য, সেইরূপ অন্যদিকে, যাহা দেখি না ব্রহ্মাণ্ডে তাহা জাগে না ভাণ্ডে, এই কথাও ঠিক ততটাই সত্য। ভাণ্ড সত্যের আধখানা, ব্রহ্মাণ্ড তার অপরার্দ্ধ। এই দুই’এতে সত্য পূর্ণ ও প্রকট হয়। এখন