সদ্গুরু, অন্তরে যাঁর প্রেরণা জাগে, বাহিরে তিনিই আপনি আপনাকে প্রকাশ করিয়া, সেই প্রেরণার প্রামাণ্য প্রতিষ্ঠা করেন, এই কথাই আমাদের দেশের পুরাতন গুরুতত্ত্বের মূল কথা। এই কথাটা বুঝিলে আত্মপ্রত্যয়ের হাতে আপনাকে ছাড়িয়া দেওয়া, আর শ্রীগুরুর হাতে আপনাকে ছাড়িয়া দেওয়া দুই এক হইয়া দাঁড়ায়। ভিতরে যিনি ধর্ম্মাবহ, অন্তরে আমাদের ধর্ম্মবুদ্ধির ভিতর দিয়া যিনি সর্ব্বদা আমাদিগকে ভালমন্দের উপদেশ দান করেন, তিনিই যদি বাহিরে, চাক্ষুষ “মোহান্ত”—গুরুরূপে প্রকাশিত হন, তখন এই গুরুর আদেশ আর ইংরেজিতে যাহাকে কনস্যন্স (Conscience) এবং আমাদের আধুনিক বাঙ্গলা ভাষায় যাহাকে বিবেক বলে, এই উভয়ই এক হইয়া যায়। সুতরাং বিবেকবাণী আর গুরুবাক্য সমান মর্য্যাদা ও প্রামাণ্য প্রাপ্ত হয়। প্রকৃত গুরুতত্ত্ব এই কথাই বলে। তবে ভিতরের conscience বা বিবেকবাণী আর বাহিরের গুরুবাক্যের মধ্যে বিরোধ উপস্থিত হইলে, কোন্টা বলবত্তর হইবে, একথা ওঠে বটে। সদ্গুরুতত্ত্ব বলে, এরূপ বিরোধ অসম্ভব। ফলতঃ সদ্গুরু কে আর সদ্গুরু কে নহেন, এখানেই তার প্রকৃত পরীক্ষাও হইয়া থাকে। সদ্গুরু স্বয়ং অন্তর্য্যামী। তিনি শিষ্যের অন্তর জানেন, কেবল ইহাই নহে, তার অন্তরে যে সকল প্রেরণা জাগে তারও প্রেরয়িতা তিনি আপনি। শিষ্যের অন্তরে তিনিই জিজ্ঞাসার উদয় করান, আবার বাহিরে মোহান্তরূপে বা আচার্য্যরূপে তিনিই শাস্ত্রাদি ব্যাখ্যা করিয়া, সে জিজ্ঞাসার নিবৃত্তিও আপনিই করিয়া থাকেন। কোন্ পথে, কি ভাবে শিষ্যের জীবন ফুটিয়া উঠিয়া, ক্রমে সে চরম সাধ্য লাভ করিবে, ইহা তিনি জানেন। জানিয়া সেই পথেই অন্তরের প্রেরণা ও বাহিরের উপদেশাদির দ্বারা তিনি তাহাকে অলক্ষিতে লইয়া যান। এই প্রকৃত গুরুপন্থা ত্রিগুণাতীত। এপথে
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৮২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীযুক্ত অশ্বিনীকুমার দত্ত
৭৭