বস্তুর দুইদিক্ মাত্র, সেইরূপ ভাল এবং মন্দও এই বস্তুর দুইদিক্ ভিন্ন আর কিছু নহে। আজি যাহা মন্দ, কাল তাহা ভাল হয়। আজ যাহা ভাল কাল তাহা মন্দ হইয়া পড়ে। দেশ, কাল, পাত্রের বিভিন্নতার দ্বারাই এ সকল ভালমন্দের বৈষম্য ও বিচার হইয়া থাকে। ফলতঃ যাহাকে conscience বা ধর্ম্মবুদ্ধি বা বিবেকবাণী বলি, তাহাও ত সর্ব্বদা এক কথা কহে না। এই ধর্ম্মবুদ্ধিরও বিকাশ হয়। এই ধর্ম্মবুদ্ধিও আজ এক কথা, কাল এক কথা বলে। সুতরাং গুরু আজ যাহাকে যে উপদেশ দান করেন, কাল যদি তাহাকে অন্যতর উপদেশ দেন, অথবা একজনকে যাহা আদেশ করেন, অন্যকে যদি তার বিপরীত আদেশ করেন, তাহাতে তাঁর উপদেশের মর্য্যাদা বা প্রামাণ্য নষ্ট হয় না ও হইতে পারে না। তবে প্রকৃত সদ্গুরুর উপদেশের সঙ্গে শিষ্যের অন্তরগত প্রেরণার কখনও কোনও গুরুতর বিরোধ হয় না ও হইতে পারে না। হয়না এই জন্য যে তিনি ঐ অত্তর দেখিয়াই উপদেশ করেন। যে উপদেশ শিষ্য গ্রহণ করিতে পারিবে না, এমন উপদেশ করিয়া সদ্গুরু কদাপি শিষ্যকে বিব্রত ও অপরাধী করেন না। বরং তিনি তার অন্তরে অন্তর্যামিরূপে যে ভাব বা যে আকাঙ্ক্ষা বা যে জিজ্ঞাসা জাগাইয়া দেন, বাহিরে মোহান্তরূপে সেইভাবের, আকাঙ্ক্ষার বা জিজ্ঞাসার উপযোগী উপদেশ দিয়াই, তাহাকে ধর্ম্মপথে লইয়া চলেন। কিন্তু আমরা মানুষের মধ্যে যে ভগবানের পূর্ণ প্রকাশ হইতে পারে, ইহা বিশ্বাস করিতে পারি না, এইজন্য আমরা সদ্গুরু দেহধারী মানুষ বলিয়া, তিনিই যে আবার অন্তর্যামীও, একথা কিছুতেই ধারণা করিতে পারি না। আর এই অক্ষমতা-নিবন্ধনই সদ্গুরুর আশ্রয় পাইয়াও, আমরা একাত্তভাবে গুরুচরণে আত্মসমর্পণ করিতে পারি না। অশ্বিনীকুমারও এটা পারিয়াছেন বলিয়া বোধ হয় না। তাঁর গুরু যে কেবল বাহিরের উপদেষ্টা নন, কিংবা তাঁর গুরুকৃপা যে একটা অলৌকিক
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৮৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীযুক্ত অশ্বিনীকুমার দত্ত
৭৯