উপায়ে ভগবানের শক্তি ও দয়াকে উদ্বুদ্ধ করিয়া তাঁর কল্যাণ সাধন করে না, অপিচ ভগবানই যে ঐ গুরুদেহকে আশ্রয় করিয়া, “চৈতাবপুষা” —অন্তর্য্যামিরূপে ও মোহান্তরূপে, ভিতরবাহিরে দুইদিকে তাঁহার জীবনকে চালাইয়া লইয়া যাইতেছেন, এ সকল কথা তিনি ভাল করিয়া ধরিয়াছেন কি না সন্দেহ। আমাদের কাহারই এ পর্য্যন্ত এ ভাগ্য হয় নাই। আর হয় নাই বলিয়াই আমরা সংসারতরঙ্গে পড়িয়া দিবানিশি এমন হাবুডুবু খাইয়া থাকি। অশ্বিনীকুমার এ পর্য্যন্ত খৃষ্টীয় নীতিবাদকে ছাড়াইয়া উঠিতে পারিয়াছেন বলিয়া মনে হয় না। তিনি খৃষ্টীয়ান্ সাধকের চক্ষেই তাঁর গুরুকে দেখেন, প্রকৃত হিন্দু সাধকের চক্ষে দেখিতে শিখেন নাই। আধুনিক খৃষ্টীয়ানেরা যিশুখৃষ্টকেই গুরুরূপে বরণ করেন। এই গুরু-খৃষ্টবাদ আর আমাদের সদ্গুরুতত্ত্ব মূলে একই সিদ্ধান্তের উপরে প্রতিষ্ঠিত হইলেও, দু’এতে প্রভেদ বিস্তর। কোনও হিন্দু আপনার গুরুকে জীবনের আদর্শরূপে বরণ করে না। খৃষ্টীয়ান সাধকেরা যিশুকে তাঁদের জীবনের আদর্শ বলিয়া নিঃসঙ্কোচে গ্রহণ করিয়া থাকেন। যিশুর অনুকরণ করাই আধুনিক খৃষ্টীয়ান সাধকের মুখ্য চেষ্টা। যিশুচরিত্রলাভই এই সাধনার চরম সাধ্য। কিন্তু হিন্দুসাধক কোনও দিন ভগবানকে বা আপনার গুরুকে অনুকরণ করেন না। ভগবানকে তাঁরা ভক্তি করেন, গুরুর উপদেশ তাঁরা পালন করেন, কিন্তু ভগবানকে বা গুরুকে আপনাদের জীবনের আদর্শরূপে কোনও দিন কল্পনা করেন না। তাঁরা অধিকারীভেদ মানেন। জীবের অধিকার এক আর ভগবানের অধিকার অন্য। শিষ্যের অধিকার এক আর গুরুর অধিকার অন্য। ভগবান বিশ্বে কতভাবে লীলা করিতেছেন; তিনি সৃষ্টি করেন, রক্ষা করেন, বিনাশ করেন, সকলই করেন। তিলি মুহূর্তে লক্ষ লক্ষ প্রাণীকে নির্ম্মম ভাবে নষ্ট করেন। তাঁর শক্তিকে আশ্রয় করিয়াই পাপী পাপ করে;
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
চরিত-কথা