আবার পুণ্যাত্মারা সেই শক্তির প্রেরণাতেই পুণ্যকর্ম্ম করেন। এ সকলই তাঁর দ্বারা হইতেছে। জীবের পক্ষে ভগবচ্চরিত্রলাভ কেবল অসাধ্য যে তাহা নয়, ভগবানের অনুকরণের ইচ্ছামাত্র মহাপাপ। সদ্গুরু সম্বন্ধেও ঐ কথা। সদ্গুরু ভাগবতী তনু লাভ করিয়া ভগবল্লীলারসে নিমগ্ন হইয়া, কত প্রকারের আপাতবিসদৃশ কথা বলেন ও বিসদৃশ কর্ম্ম করেন। ভিন্ন ভিন্ন শিষ্যকে তাঁরা বিভিন্ন উপদেশ দেন। একজনকে যাহা বিহিত ও ভাল বলিয়া আচরণ করিতে বলেন, অন্যজনকে তাহা অবিহিত ও মন্দ বলিয়া বর্জ্জন করিতে উপদেশ দেন। এ অবস্থায় শিষ্যের পক্ষে আপনার অধিকারকে উল্লঙ্ঘন না করিয়া, গুরুর অনুসরণ করা অসম্ভব। এরূপ প্রয়াসেও গুরুতর অপরাধ হইয়া থাকে। কিন্তু আধুনিক শিক্ষা এ সকল নিগূঢ় কথা ভাল করিয়া ধরিতে পারে না।আমাদের নীতিবাদ সকল মানুষকে ভগবচ্চরিত্রলাভ করিতে উপদেশ দেয়। কিন্তু গুরুর অনুকরণ করা নহে, অনুগত হওয়াই শিষ্যের প্রধান ধর্ম্ম। হিন্দু শিষ্য তাহাতেই কেবল এই বলিয়া প্রার্থনা করেন—
জানামি ধর্ম্মং নচ মে প্রবৃত্তিঃ
জানাম্যধর্ম্মং নচ মে নিবৃত্তিঃ।
ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদি স্থিতেন
যথা নিযুক্তোঽস্মি তথা করোমি।
কিন্তু ইংরেজি শিখিয়া যে সকল যুক্তি ও সিদ্ধান্তের সাহায্যে আমরা একালে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে পরিমার্জিত করিয়া থাকি, তাহার দ্বারা হিন্দুর এই সদ্গুরুতত্ত্বের নিগূঢ় মর্ম্ম ও রহস্য ভেদ করা সহজ নহে। খৃষ্টীয়ান সাধনাতেও এই তত্ত্ব যে একেবারে ফুটিয়া উঠে নাই, তাহা নহে। বিগত খৃষ্টীয় শতাব্দীর যুরোপীয় ধর্ম্ম— বিজ্ঞান কিয়ৎপরিমাণে এই তত্ত্বের উপরেই খৃষ্টীয় সিদ্ধান্তকে গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করিয়াছে। আধুনিক বিজ্ঞান