কিন্তু আমরা যে খৃষ্টীয়ান সিদ্ধান্তের কথা সচরাচর এদেশে শুনিতে পাই, তাহাতে এ সকল গভীর কথার কোনও সন্ধান পাওয়া যায় না। মামুলী খৃষ্টীয়ান ধর্ম্মে এ তত্ত্ব এখনও ভাল করিয়া আয়ত্ত করিতে পারে নাই। প্রচলিত য়ুরোপীয় দর্শনাদিতেও এই সত্যটা এখন পর্যন্ত পরিস্ফুট হয় নাই। সুতরাং আমরা ইংরেজি শিখিয়া ইহার কোনই পরিচয় পাই না। আমাদের আধুনিক শিক্ষা দীক্ষা এখনও খৃষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্যক্তিত্বাভিমানী যুক্তিবাদকে অবলম্বন করিয়াই চলিয়াছে।
খৃষ্টীয় সমাজেও এখন অনেক লোকে যিশুখৃষ্টকে কেবল একজন আদর্শপুরুষ বলিয়া গ্রহণ করিয়া থাকেন। কিছুদিন হইতে এই ভাবটাই রুরোপ ও আমেরিকায় প্রধান হইয়া উঠিয়াছে। খৃষ্টেতে ঐকান্তিক আত্মসমর্পণ অপেক্ষা, আপনার সাধনবলে খৃষ্টচরিত্রের অনুশীলন ও অনুকরণ করিয়া ঐ উদার ও বিশুদ্ধ চরিত্রলাভই এখন খৃষ্টীয় সাধনের সাধ্য হইয়া পড়িয়াছে। খৃষ্টীয়ান সাধু ও সাধকেরা আপনাদের কর্তব্যাকর্ত্তব্য নির্ধারণে এখন— “যিশু এই অবস্থায় কি করিতেন?” এই প্রশ্নেরই আলোচনা করিয়া থাকেন, আর তিনি যাহা করিতেন, যেরূপ চলিতেন, তাহা করিতে ও সেইরূপ চলিতেই চেষ্টা করেন। অশ্বিনীকুমারও, আমার মনে হয়, কতকটা এরূপভাবেই আপনার গুরুদেবের পদাঙ্কানুসরণ করিয়া আপনার ধর্ম্মজীবন ও কর্ম্মজীবনকে গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করিয়া আসিয়াছেন। তাঁর বিস্তৃত কর্ম্মজীবনে যখনই যে সমস্যা উপস্থিত হইয়াছে, তখনই—এ অবস্থায় তাঁর গুরুদেব কি করিতেন, তিনি এই প্রশ্ন তুলিয়া, তার যথাসাধ্য মীমাংসা করিয়াই, আপনার কর্তব্য নির্দ্ধারণ করিতে গিয়াছেন। আর এই জন্যই সময় সময় লোকে তাঁর কর্ম্মজীবনে কতকটা দুর্ব্বলতা, এমন কি অব্যবস্থিততা এবং অসামঞ্জস্যেরও পরিচয় পাইয়াছে বলিয়া ভাবিয়াছে।