এবং শিক্ষার প্রভাব কেহই অতিক্রম করিতে পারে নাই। তত্রাচ, এ কথা কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না যে, অশিক্ষিত জনমণ্ডলীর চিত্তের উপরে তিনি যে ভক্তির আসন লাভ করিয়াছেন, তাহাতেই তাঁহাকে এতটা বড় করিয়া তুলিয়াছে। তাঁর হিন্দুত্বেই অশ্বিনীকুমারের লোকনায়কত্বের মূল প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।
অশ্বিনীকুমারের চরিত্রে শাক্ত অপেক্ষা বৈষ্ণব প্রভাবই বলবত্তর। আধুনিক সাধনায় মানুষকে অতি বড় করিয়া তুলিয়াছে। মানুষের মনুষ্যত্বের উপরেই আজিকার দেবত্ব প্রতিষ্ঠিত। নর-সেবাই দেব-সেবা। আর ইহার সঙ্গে আমাদের বৈষ্ণব সাধনার অতি সুন্দর মিল রহিয়াছে। নরের মধ্যে নারায়ণকে দেখাই, বৈষ্ণব সাধনার মূল সাধ্য—
“অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তমাশ্রিতং”
ইহাই বৈষ্ণবতত্ত্বের মূলসূত্র। অন্য কোন ধর্ম্মসম্প্রদায়ই এমন স্পষ্ট ও নির্ভীকভাবে মানবের ঈশ্বরত্বের কথা প্রচার করে নাই। মানবের দেহ এবং চিত্তবৃত্তিকে এতটা প্রাধান্য দেওয়া, পিতা-পুত্র, নায়ক—নায়িকা, বন্ধু-বান্ধব প্রভৃতির সম্বন্ধকে ভগবানের লীলা-বৈচিত্র্য বলিয়া ধরিয়া লওয়া, বৈষ্ণবতত্ত্ব এবং বৈষ্ণব সাধনার বিশেষত্ব। মানবের দেহ ও ইন্দ্রিয়াদি এবং তাহার চিত্তবৃত্তির বিনাশে বা বিরোধে নহে, কিন্তু এ সকলকে একটা চরম আধ্যাত্মিক আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত করাই বৈষ্ণবধর্ম্মের মূলমন্ত্র। এই ভাব অশ্বিনীকুমারের সামাজিক আচার ব্যবহারে বিশেষরূপে পরিলক্ষিত হয়।;
সাধারণতঃ অশ্বিনীকুমার হিন্দু সমাজের সমস্ত বিধিনিষেধের পরিপোষক; কিন্তু কর্তব্যের প্রেরণায় তিনি সকল সংস্কারের গণ্ডী কাটাইয়া উঠেন। জাতিভেদের বিরুদ্ধে তিনি কখনও বক্তৃতা দেন নাই, কিন্তু সামাজিক কর্তব্য এবং মানবের কল্যাণের জন্য অনেক স্থলেই তিনি