মিত্রভাবেই হউক আর শত্রুভাবেই হউক, আপনাদের সমসাময়িক জনমণ্ডলীর জ্ঞান, রস, আশা, আদর্শ, প্রয়াস ও প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হইয়া থাকেন, ইতিহাস কেবল তাঁহাদেরই স্মৃতিকে জাগাইয়া রাখিতে চাহে।
ঐতিহাসিক কীর্ত্তির বিশেষত্ব
কিন্তু ইতিহাসে যাঁহাদের নাম থাকিয়া যায়, কেবল তাঁহারাই যে সমাজের শ্রেষ্ঠ জন, কেবল তাঁহাদেরই নিকটে যে সমাজ অশেষ ও অশোধনীয় ঋণজালে আবদ্ধ থাকে, অপরের নিকটে থাকে না, এমন কথা কিছুতেই বলা যায় না। ফলতঃ ইতিহাস যে কেবল ভালকেই মনে করিয়া রাখে, মন্দকে ভুলিয়া যায়, তাহাও নহে। রোমের ইতিহাস পুণ্যশ্লোক মার্কাস্ অরিলিয়সের যেমন, তেমনি ক্রুরমতি নীরোরও নামকে স্মরণীয় করিয়া রাখিয়াছে। আমাদের প্রাচীন পুরাণ-কথায় রামও আছেন, রাবণও আছেন; যুধিষ্ঠিরও আছেন, দুঃশাসনও আছেন। ভারতের পুণ্যস্মৃতি জনকের নামও মাথায় করিয়া রাখিয়াছে, বেণ রাজার নামও ভুলিয়া যায় নাই। ইতিহাস কেবল ভালকেই স্মরণীয় করিয়া রাখে, মন্দকে রাখে না, তাহা নয়। ভাল হউক, মন্দ হউক, যাহা কিছু অলোকসামান্য, ইতিহাস তাহাকেই আঁকড়াইয়া ধরে। মানবের প্রকৃতি হইতেই তো ইতিহাসের বিচার-পদ্ধতির উৎপত্তি। আর যাহা নিত্য, তাহা অপেক্ষা যাহা নৈমিত্তিক, যাহা স্থিতিহেতু, তাহা অপেক্ষা যাহা গতি-সহায়; মানুষের মন তাহারই দ্বারা সমধিক আকৃষ্ট হইয়া থাকে। এই কারণে যাঁহারা জনসমাজের স্থিতির সহায়, তাঁহাদিগকে উপেক্ষা করিয়া, যাঁহারা জনসমাজের গতির হেতু হইয়া উঠেন, ইতিহাস তাঁহাদিগের স্মৃতিকেই বিশেষভাবে জাগাইয়া রাখিতে