ইতিহাসে স্মরণীয় হইয়া রহেন। কিন্তু যাঁহারা এক দিকে দিক্বিদিক্ জ্ঞানশূন্য হইয়া, এইরূপে সমাজের গতিবেগকে আত্যন্তিক ভাবে বাড়াইয়া তোলেন, তাঁহারা যেমন সমাজের দৈর্ঘ্য ও শান্তি নষ্ট করিয়া, তাহার আভ্যন্তরীণ প্রাণবস্তুকে পীড়িত করেন; সেইরূপ যাঁহারা অন্যদিকে অভিনব যুগধর্ম্মের ও কালধর্ম্মের প্রতি অমনস্ক হইয়া, এই প্রবুদ্ধ গতিবেগকে জোর করিয়া প্রতিরোধ করিতে বদ্ধপরিকর হন, তাঁহারাও সেইরূপই অযথা সংগ্রাম বাঁধাইয়া, সমাজ-প্রাণকে রক্ষা করিতে যাইয়াই, তাহাকে নষ্ট করিতে উদ্যত হন। কিন্তু যাঁহারা এই সংগ্রামে প্রবৃত্ত না হইয়া, ধীরভাবে তার পরিণাম লক্ষ্য করিতে থাকেন এবং যতক্ষণ না এই সংগ্রামের নিবৃত্তি হইয়া নূতনের ও পুরাতনের মধ্যে একটা উচ্চতর সন্ধি ও সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, ততক্ষণ কোন এক পক্ষকে একান্তভাবে অবলম্বন না করিয়া যথাসম্ভব নিরপেক্ষভাবে, এই কলহ-কোলাহলের মধ্যে সমাজের মর্ম্মস্থলে যে সনাতন প্রাণবস্তু আপনাকে লুকাইয়া রাখিতে চেষ্টা করে, তাহাকেই কেবল ধরিয়া বসিয়া রহেন, —তাঁহারাই প্রকৃতপক্ষে সমাজের মেরুদণ্ডস্বরূপ। কোন সমাজে, কালপ্রভাবে, তাহার পূর্ব্বকৃত ও অধুনা-চেষ্টিত কর্ম্মবশে, এইরূপ সমর-সঙ্কট উপস্থিত হইলে, যাঁহারা নূতনের লোভেও আত্মবিস্মৃত হন না, আর তার ভয়বিভীষিকাতেও বিক্ষিপ্ত হইয়া উঠেন না,— কামবশাৎ নূতনকেও আলিঙ্গন করিতে ধাবিত হন না, আর কার্পণ্যবশাৎ পুরাতনের জীর্ণতাকেও আঁকড়াইয়া ধরিয়া রহেন না; কিন্তু ইহাদের পরস্পরের গুণাগুণ ও দাওয়াদাবীর পরীক্ষা হইয়া পরিণামে যে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠিত হইবেই হইবে, ধীরভাবে তাহারই প্রতীক্ষায় বসিয়া থাকেন,—প্রত্যেক যুগসন্ধিস্থলে, সমাজের সনাতনী প্রাণশক্তি তাঁহাদিগকেই আশ্রয় করিয়া আত্মরক্ষা করে। কলহকোলাহলপ্রিয় ইতিহাস এই সকল লোকের খোঁজ লয় না। কিন্তু ইতিহাসের
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৯৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীযুক্ত গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
৯৩