হীন অবস্থায় বসে… গভীর রাত, ঘোর অন্ধকার… সামান্য আগুন জ্বলচে। মাথার ওপর জলকণাশূন্য স্তব্ধ বায়ুমণ্ডলের গুণে আকাশের অগণ্য তারা জ্বলজ্বল করচে যেন ইলেকট্রিক আলোর মত… নীচে তার চারিধার ঘিরে অন্ধকারে মাংসলোলুপ নীরব নেকড়ে, কোয়োট, হায়েনার দল।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার এটাও মনে হোল, বাংলার পাড়াগাঁয়ে ম্যালেরিয়ায় ধুঁকে সে মরচে না। এ মৃত্যু বীরের মৃত্যু! পদব্রজে কালাহারি মরুভূমি পার হয়েচে সে— একা। মরে গিয়ে চিমানিমানি পর্ব্বতের শিলায় নাম খুদে রেখে যাবে। সে একজন বিশিষ্ট ভ্রমণকারী ও আবিষ্কারক। অত বড় হীরের খনি সেই তো খুঁজে বার করেছে! আলভারেজ মারা যাওয়ার পরে সেই বিশাল অরণ্য ও পার্ব্বত্য অঞ্চলের গোলকধাঁধা থেকে সে তো একাই বার হতে পেরে এতদূর এসেচে! এখন সে নিরুপায়, অসুস্থ, চলত্শক্তি রহিত। তবুও সে যুঝচে, ভয় তো পায়নি, সাহস তো হারায়নি। কাপুরুষ, ভীরু নয় সে। জীবন-মৃত্যু তো অদৃষ্টের খেলা। না বাঁচলে তার দোষ কি?
দীর্ঘ রাত্রি কেটে গিয়ে পুবদিক ফরসা হোল। সঙ্গে সঙ্গে বন্য জন্তুর দল কোথায় পালালো। বেলা বাড়চে, আবার নির্ম্মম সূর্য্য জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে সুরু করেচে দিকবিদিক। সঙ্গে সঙ্গে শকুনির দল কোথা থেকে এসে হাজির।