পাতা:চাঁদের পাহাড়.djvu/৯৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯০
চাঁদের পাহাড়

টকটকে লাল ইরিথ্রিনা প্রকাণ্ড গাছে ফুটেচে। পুষ্পিত ইপোমিয়া লতার ফুল দেখতে ঠিক বাংলাদেশের বনকমলী ফুলের মত কিন্তু রংটা অত গাঢ় বেগুণী নয়। শাদা ভেরোনিকা ঘন সুগন্ধে বাতাসকে ভারাক্রান্ত করেচে। বন্য কফির ফুল, রঙীন বেগোনিয়া। মেঘের রাজ্যে ফুলের বন, মাঝে মাঝে সাদা বেলুনের মত মেঘপুঞ্জ গাছপালার মগ্‌ডালে এসে আট্‌কাচ্চে - কখনও বা আরও নেমে এসে ভেরোনিকার বন ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্চে।

সাড়ে সাত হাজার ফুটের ওপর থেকে বনের প্রকৃতি একেবারে বদলে গেল। এই পর্য্যন্ত উঠতে ওদের আরও দুদিন লেগেচে। আর অসহ্য কষ্ট, কোমর পিঠ ভেঙে পড়চে। এখানে বনানীর মূর্ত্তি বড় অদ্ভূত, প্রত্যেক গাছের গুঁড়ি ও শাখাপ্রশাখা পুরু শেওলা ঝুলচে - সে শেওলা কোথাও কোথাও এত লম্বা যে, গাছ থেকে ঝুলে প্রায় মাটীতে এসে ঠেকবার মত হয়েচে - বাতাসে সেগুলো আবার দোল খাচ্চে, তার ওপর কোথাও সূর্য্যের আলো নেই, সব সময়ই যেন গোধূলি। আর সবটা ঘিরে বিরাজ করচে এক অপার্থিব ধরণের নিস্তব্ধতা - বাতাস বইচে তারও শব্দ নেই, পাখীর কুজন নেই সে বনে - মানুষের গলার সুর নেই, কোনো জানোয়ারের ডাক নেই। যেন কোন অন্ধকার নরকে দীর্ঘশ্মশ্রূ প্রেতের দলের মধ্যে এসে পড়েচে ওরা।