সেদিন অপরাহ্নে যখন আলভারেজ তাঁবু ফেলে বিশ্রাম করবার হুকুম দিলে - তখন তাঁবুর বাইরে বসে এক পাত্র কফি খেতে খেতে শঙ্করের মনে হোল, এ যেন সৃষ্টির আদিম যুগের অরণ্যাণী, পৃথিবীর উদ্ভিদজগৎ যখন কোনো একটা সুনির্দ্দিষ্ট রূপ ও আকৃতি গ্রহণ করেনি, যে যুগে পৃথিবীর বুকে বিরাটকায় সরীসৃপের দল জগৎজোড়া বনজঙ্গলের নিবিড় অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতো - সৃষ্টির সেই অতীত প্রভাতে সে যেন কোন যাদুমন্ত্রের বলে ফিরে গিয়েচে।
সন্ধ্যার পরেই সমগ্র বনানী নিবিড় অন্ধকারে আবৃত হোল। তাঁবুর বাইরে ওরা আগুন করেচে - সেই আলোর মণ্ডলীর বাইরে আর কিছু দেখা যায় না। এ বনের আশ্চর্য্য নিস্তব্ধতা শঙ্করকে বিস্মিত করেচে। বনানীর সেই বিচিত্র নৈশ শব্দ এখানে স্তব্ধ কেন? আলভারেজ চিন্তিত মুখে ম্যাপ দেখছিল। বল্লে - শোনো শঙ্কর, একটা কথা ভাবচি। আট হাজার ফুট উঠলাম, কিন্তু এখনও পর্ব্বতের সেই খাঁজটা পেলাম না যেটা দিয়ে আমরা রেঞ্জ পার হয়ে ওপারে যাবো। আর কত ওপরে উঠবো? যদি ধরো এই অংশে স্যাডলটা নাই থাকে?
শঙ্করের মনেও এ খটকা যে না জেগেচে তা নয়। সে আজই ওঠবার সময় মাঝে মাঝে ফিল্ড গ্ল্যাস দিয়ে ওপরের দিকে দেখবার চেষ্টা করেচে, কিন্তু ঘন মেঘে বা কুয়াশায় ওপরের দিকটা সর্ব্বদাই আবৃত থাকায় তার চেষ্টা ব্যর্থ