চারিত্রপূজা אס না করিয়া থাকিতে পারি না । আমি স্ত্রীজাতির পক্ষপাতী বলিয়া অনেকে নির্দেশ করিয়া থাকেন । আমার বোধ হয়, সে নির্দেশ অসঙ্গত নহে। যে ব্যক্তি রাইমণির স্নেহ, দয়া, সৌজন্য প্রভৃতি প্রত্যক্ষ করিয়াছে এবং ঐ সমস্ত সদগুণের ফলভোগী হইয়াছে, সে যদি স্ত্রীজাতির পক্ষপাতী না হয়, তাহা হইলে, তাহার তুল্য কৃতঘ্ন পামর ভূমণ্ডলে নাই।” স্ত্রীজাতির স্নেহ-দয়া-সৌজন্য হইতে বঞ্চিত হইয়াছে, আমাদের মধ্যে এমন হতভাগ্য কয়জন আছে ? কিন্তু ক্ষুদ্র হৃদয়ের স্বভাব এই যে, সে যে পরিমাণে অযাচিত উপকার প্রাপ্ত হয়, সেই পরিমাণে অকৃতজ্ঞ হইয়া উঠে । যাহা-কিছু সহজেই পায়, তাহাই আপনার প্রাপ্য বলিয়া জানে ; নিজের দিক্ হইতে যে কিছুমাত্র দেয় আছে, তাহ সহজেই ভুলিয়া যায় । আমরাও সংসারে মাঝে মাঝে রাইমণিকে দেখিতে পাই ;–এবং যখন সেবা করিতে আসেন, তখন র্তাহার সমস্ত যত্ন এবং প্রীতি অবহেলাভরে গ্রহণ করিয়া তাহাকে পরম অনুগ্রহ করিয়া থাকি ;-তিনি যখন চরণপূজা করিতে আসেন, তখন আপন পঙ্ককলঙ্কিত পদযুগল অসঙ্কোচে প্রসারিত করিয়া দিয়া অত্যন্ত নির্লজ্জ স্পৰ্দ্ধাভরে সত্যসত্যই আপনাদিগকে নরদেবতারূপে নারীসম্প্রদায়ের পূজাগ্রহণের অধিকারী বলিয়া জ্ঞান করি। কিন্তু এই সকল সেবকপূজক অবলাগণের দুঃখমোচন এবং স্বথস্বাস্থ্যবিধানে আমাদের মতো মৰ্ত্তাদেবগণের মুমহৎ ঔদাসীন্ত কিছুতেই দূর হয় না ; তাহার কারণ, নারীদের কৃত সেবা কেবল আমরা আমাদের সাংসারিক স্বাৰ্থমুগের সহিত জড়িত করিয়া দেখি, তাহা আমাদের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়া কৃতজ্ঞতা উদ্রেক করিবার অবকাশ পায় না। বিদ্যাসাগর প্রথমত বেথুনাহেবের সহায়তা করিয়া বঙ্গদেশে স্ত্রীশিক্ষার সূচনা ও বিস্তার করিয়া দেন। অবশেষে যখন তিনি
পাতা:চারিত্রপুজা ২য় সংস্করণ.pdf/৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।