পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা ݂ܟܬ݂ܵ ݂ܵ স্বভাবতই শক্তি-উপাসনায় মাতে না । ক্ষমতা আমাদের আরাধ্য নহে, মঙ্গলই আমাদের আরাধ্য। আমাদের ভক্তি শক্তির অভ্ৰভেদী সিংহদ্বারে নহে, পুণ্যের স্নিগ্ধ-নিভৃত দেবমন্দিরেই মস্তক নত করে। আমরা বলি-কীীত্তিৰ্যস্য স জীবতি । যিনি ক্ষমতাপন্ন লোক, তিনি নিজের কীত্তির মধ্যেই নিজে বাচিয়া থাকেন। তিনি যদি নিজেকে বঁাচাইতে না পারেন, তবে তঁহাকে বঁাচাইবার চেষ্টা আমরা করিলে তাহা হাস্যকর হয়। বঙ্কিমকে কি আমরা স্বহস্তেরচিত পাথরের মূৰ্ত্তিদ্বারা অমরত্ব লাভে সহায়তা করিব ? আমাদের চেয়ে তাহার ক্ষমতা কি অধিক ছিল না ? তিনি কি নিজের কীৰ্ত্তিকে স্থায়ী করিয়া যান নাই ? হিমালয়কে স্মরণ রাখিবার জন্য কি চান্দা করিয়া তাহার একটা কীৰ্ত্তিস্তম্ভ স্থাপন করার প্রয়োজন আছে ? হিমালয়কে দর্শন করিতে গেলেই তাহার দেখা পাইব-অন্যত্র তাহাকে স্মরণ করিবার উপায় করিতে যাওয়া মূঢ়ত । কৃত্তিবাসের জন্মস্থানে বাঙালি একটা কোনোপ্রকারের ধুমধাম করে নাই বলিয়া বাঙালি কৃত্তিবাসকে অবজ্ঞা করিয়াছে, এ কথা কেমন করিয়া বলিব ? যেমন “গঙ্গা পূজি গঙ্গাজলে,” তেমনি বাংলাদেশে মুদির দোকান হইতে রাজার প্রাসাদ পৰ্য্যন্ত কীৰ্ত্তিবাসের কীৰ্ত্তিদ্বারাই কৃত্তিবাস কতো শতাব্দী ধরিয়া প্ৰত্যহ পূজিত হইয়া আসিতেছেন। এমন প্ৰত্যক্ষপূজা আর কিসে হইতে পারে ? যুরোপে যে দল বাধিবার ভাব আছে, তাহার উপযোগিতা নাই, এ কথা বলা মূঢ়ত । যে সকল কাজ বলসাধ্য;-বহুলোকের আলোচনার দ্বারা সাধ্য, সে সকল কাজে দল না। বঁধিলে চলে না । দল বাধিয়া য়ুরোপ যুদ্ধে, বিগ্ৰহে, বাণিজ্যে রাষ্ট্রব্যাপারে বড় হইয়া উঠিয়াছে, সন্দেহ নাই। মৌমাছির পক্ষে যেমন চাক-বাধা, ঘুরোপের পক্ষে তেমনি দলবাধা প্ৰকৃতিসিদ্ধ। সেইজন্য যুরোপ দল বাধিয়া দয়া করে-ব্যক্তিগত দয়াকে প্রশ্ৰয় দেয় না, দল-বাধিয়া পূজা করিতে যায়-ব্যক্তিগত পুজাহিকে .