পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত ○ ○ হইতে সম্মত আছ ; কিন্তু, কি আশ্চৰ্য্য ! শাস্ত্রের বিধি অবলম্বনপূর্বক, পুনরায় বিবাহ দিয়া তাহাদিগকে দুঃসহ বৈধব্যযন্ত্রণা হইতে পরিষ্কাণ করিতে, এবং আপনাদিগকেও সকল বিপদ হইতে মুক্ত করিতে, সম্মত নহ। তোমরা মনে কর, পতিবিয়োগ হইলেই স্ত্রীজাতির শরীর পাষাণময় হইয়া যায়; দুঃখ আর দুঃখ বলিয়া বোধ হয় না ; যন্ত্রণা আর যন্ত্রণা বলিয়া বােধ হয় না ; দুর্জয় রিপুবৰ্গ এককালে নিৰ্ম্মল হইয়া যায়। কিন্তু, তােমাদের এই সিদ্ধান্ত যে নিতান্ত ভ্ৰান্তিমূলক, পদে পদে তাহার উদাহরণ প্ৰাপ্ত হইতেছ। ভাবিয়া দেখ, এই অনাবধানদোষে, সংসারতরুর কি বিষময় ফলভোগ করিতেছি ।” O রমণীর দেবীত্ব ও বালিকার ব্ৰহ্মচৰ্য্যমাহাত্ত্ব্যের সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর আকাশগামী ভাবুকতার ভূরিপরিমাণ সজল বাষ্প সৃষ্টি করিতে বসেন নাই ; তিনি তঁহার পরিষ্কার সবল বুদ্ধি ও সরল সহৃদয়তা লইয়া সমাজের যথার্থ অবস্থা ও প্ৰকৃত বেদনায় সকরুণ হস্তক্ষেপ করিয়াছেন । কেবলমাত্র মধুর বােক্যরসে চিড়িাকে সরস করিতে সে-ই চায়, যাহার দধি নাই। কিন্তু বিদ্যাসাগরের দধির অভাব না থাকাতে বাকপটুতার প্রয়োজন হয় নাই। দয়া। আপনি দুঃখের স্থানে গিয়া আকৃষ্ট হয়। বিদ্যাসাগর স্পষ্ট দেখিতেছেন যে, প্ৰকৃত সংসারে বিধবা হইবামাত্র বালিকা হঠাৎ দেবী হইয়া উঠে না, এবং আমরাও তাহার চতুর্দিকে নিষ্কলঙ্ক দেবলোক সৃষ্টি করিয়া বসিয়া নাই ; এমন অবস্থায় সে-ও দুঃখ পায়, সমাজেরও রাশিরাশি অমঙ্গল ঘটে, ইহা প্ৰতিদিনের প্রত্যক্ষ সত্য । সেই দুঃখ, সেই অকল্যাণ নিবারণের উপযুক্ত উপায় অবলম্বন না করিয়া বিদ্যাসাগর থাকিতে পারেন না ; আমরা সেস্থলে সুনিপুণ কাব্যকলা প্রয়োগপূর্বক একটা স্বকপোলকল্পিত জগতের আদর্শ-বৈধব্য কল্পনা করিয়া তৃপ্তিলাভ করি। কারণ, ऊँीशद्र नद्भज्ञ ধৰ্ম্মবুদ্ধিতে তিনি সহজেই যে বেদন বোধ করিয়াছেন, আমরা সেই বেদন যথার্থক্কাপে হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করি