পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰিদ্যাসাগর চরিত (26 ঈশ্বরচন্দ্র যখন কলিকাতায় অধ্যয়ন করিতেন, তখন তাহার দরিদ্রা “জননীদেবী চরকাসুত কাটিয়া পুত্রদ্বয়ের বস্ত্ৰ প্ৰস্তুত করিয়া কলিকাতায় পাঠাইতেন।” * সেই মোটা কাপড়, সেই মাতৃস্নেহমণ্ডিত দারিদ্র্য তিনি চিরকাল সগৌরবে সর্বাঙ্গে ধারণ করিয়াছিলেন। তাহার বন্ধু তদানীন্তন লেফটেনাণ্ট গবর্ণর হ্যালিডেসাহেব তাহাকে রাজসাক্ষাতের উপযুক্ত সাজ করিয়া আসিতে অনুরোধ করেন। বন্ধুর অনুরোধে বিদ্যাসাগর কেবল দুইএকদিন চোগা-চাপকান পরিয়া সাহেবের সহিত দেখা করিতে গিয়াছিলেন। কিন্তু সে লাজ আর সহ্য করিতে পারিলেন না । বলিলেন, “আমাকে যদি এই বেশে আসিতে হয়, তবে এখানে আর আমি আসিতে পারিব না ।” হ্যালিডে তঁাহাকে তাহার অভ্যস্তবেশে আসিতে অনুমতি দিলেন। ব্ৰাহ্মণপণ্ডিত যে চটজুতা ও মোটা ধুতিচাদর পরিয়া সর্বত্র সম্মানলাভ করেন, বিদ্যাসাগর রাজদ্বারেও তাহা ত্যাগ করিবার আবশ্যকতা বোধ করেন নাই। তাহার নিজের সমাজে যখন ইহাই ভদ্রবেশ, তখন তিনি অন্য সমাজে অন্য বেশ পরিয়া আপন সমাজের ও সেই সঙ্গে আপনার অবমাননা করিতে চাহেন নাই। শাদা ধুতি ও শাদা চাদরকে ঈশ্বরচন্দ্ৰ যে গৌরব অর্পণ করিয়াছিলেন, আমাদের বর্তমান রাজাদের ছদ্মবেশ পরিয়া আমরা আপনাদিগকে সে গৌরব দিতে পারি না ; বরঞ্চ এই কৃষ্ণচৰ্ম্মের উপর দ্বিগুণতর কৃষ্ণকলঙ্ক লেপন করি । আমাদের এই অবমানিত দেশে ঈশ্বরচন্দ্রের মত এমন অখণ্ড পৌরুষের আদর্শ কেমন করিয়া জন্মগ্রহণ করিল, আমরা বলিতে পারি না । কাকের বাসায় কোকিলে ডিম পাড়িয়া যায়ুঃ-মানব-ইতিহাসের বিধাতা সেইরূপ গোপনে কৌশলে বঙ্গভূমির প্রতি বিদ্যাসাগরকে মানুষ করিবার ভার দিয়াছিলেন। " সেইজন্য বিদ্যাসাগর এই বঙ্গদেশে একক ছিলেন। এখানে যেন ४ नाश्म असू5ल বিদ্যারত্ব প্রণীত বিদ্যাসাগরজীবনচরিত, 7