পাতা:চার অধ্যায় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জানতুম থার্ড ক্লাসের টিকিটটা আমাদের আধুনিক আভিজাত্যের একটা উজ্জ্বল নিদর্শন। অবশেষে তুমি চড়লে রেলগাড়িতে সেকেণ্ডক্লাসে। আমার দেহমনকে প্রবল টান দিলে সেই ক্লাসের দিকে। এমন কি, মনে একটা চাতুরীর কল্পনা এসেছিল, ভেবেছিলুম, ট্রেন ছাড়বার শেষমুহূর্তে উঠে পড়ব তােমার গাড়িতে, বলব,― তাড়াতাড়িতে ভুলে উঠেছি। কাব্যশাস্ত্রে মেয়েরাই অভিসার করে এসেছে, সংসারবিধিতে বাধা আছে বলেই কবিদের এই করুণা। উসখুস-করা মনের যত সব এলােমেলাে ইচ্ছে ভিতরে আঁধার কোঠায় ঘুর খেয়ে খেয়ে দেয়ালে মাথা ঠুকে ঠুকে বেড়ায়। এদের কথা মেয়েরা পর্দার বাইরে কিছুতে স্বীকার করতে চায় না। তুমি আমাকে স্বীকার করিয়েছ।”

 “কেন স্বীকার করলে।”

 “নারীজাতির গুমর ভেঙে কেবল ওই স্বীকারটুকুই তােমাকে দিতে পেরেছি, আর তাে কিছু পারিনি।”

 হঠাৎ অতীন এলার হাত চেপে ধরে বলে উঠল, “কেন পারলে না। কিসের বাধা ছিল আমাকে গ্রহণ করতে। সমাজ? জাতিভেদ?”

 “ছি, ছি, এমন কথা মনেও কোরাে না। বাইরে বাধা নয়, বাধা অন্তরে।”

৫৬