পাতা:চার অধ্যায় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

না, উত্তেজিত হয়ে সত্য প্রমাণ উপস্থিত করে বিচারকর্ত্রীর সামনে। কিন্তু কতৃত্বের অহমিকার কাছে অকাট্য যুক্তিই দুঃসহ স্পর্ধা। অনুকূল ঝােড়াে হাওয়ার মতাে তাতে বিচারের নৌকো এগিয়ে দেয় না, নৌকো দেয় কাত করে।

 এই পরিবারে আরও একটি উপসর্গ ছিল যা এলার মনকে নিয়ত আঘাত করেছে। সে তার মায়ের শুচিবায়ু। একদিন কোনাে মুসলমান অভ্যাগতকে বসবার জন্যে এলা মাদুর পেতে দিয়েছিল—সে মাদুর মা ফেলে দিলেন, গালচে দিলে দোষ হত না। এলার তার্কিক মন, তর্ক না করে থাকতে পারে না। বাবাকে একদিন জিজ্ঞাসা করলে, “আচ্ছা এই সব ছোঁয়াছুয়ি নাওয়াখাওয়া নিয়ে কটকেনা মেয়েদেরই কেন এত পেয়ে বসে? এতে হৃদয়ের তাে স্থান নেই, বরং বিরুদ্ধতা আছে; এ তাে কেবল যন্ত্রের মতাে অন্ধভাবে মেনে চলা।” সাইকলজিস্ট বাবা বললেন, “মেয়েদের হাজার বছরের হাতকড়ি-লাগানাে মন; তারা মানবে, প্রশ্ন করবে না,—এইটেতেই সমাজ-মনিবের কাছে বকশিশ পেয়েছে, সেইজন্যে মানাটা যত বেশি অন্ধ হয় তার দাম তাদের কাছে তত বড়ো হয়ে ওঠে। মেয়েলি পুরুষদেরও এই দশা।” আচারের নিরর্থকতা সম্বন্ধে এলা বারবার