পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তুমি যখন আসবে দেখতে পাবে অনেক নতুন বাড়ি উঠচে। আমাদের ছুটির নিয়মও বদলে গেছে। এখন থেকে গ্রীষ্মের তিন মাস ছুটি হবে, পূজোর ছুটি থাকবে না। দুবার ছুটিতে অনেক অসুবিধা। যাদের বাড়ি দূরে তাদের যাতায়াতের খরচও বেশি হয়, যাদের গ্রামে ম্যালেরিয়া তারা ম্যালেরিয়ায় বোঝাই হয়ে আসে। এখানে তুমি যাদের সঙ্গে থার্ড গ্রুপে পড়তে তারা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠেচে। শ্রীমতী রেখা দেবী “সেই গৌরবে মুখ অত্যন্ত গম্ভীর করে মাথা উপরে তুলে বেড়াচ্চে— এইবার তারা ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার প্রত্যন্তদেশে (frontier) এসে পেছিল। কিন্তু গণিতশাস্ত্রে রেখা দেবীর বিদ্যা প্রায় আমারই মত, সেইজনা আজ সকালে মাধবীবিতানে জগদানন্দের ক্লাসে যখন তাকে দেখলুম তখন রেখার মুখে আনন্দের রেখামাত্র দেখা গেল না। আমার ইচ্ছা হল তাকে নামতার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি, পাঁচ নাম কত হয়— আমি নিশ্চয় বলতে পারি সে কখনই বলতে পারত না যে, সাতাশ হয়— হয়ত ফস করে বলে ফেলত পয়তাল্লিশ। গোরার" ক্লাসে যার দুৰ্গতি স্মরণ করে তোমার হাসি পেত সেই তোমার জাম-তলার প্রিয় সহচরী কল্যাণী এখানে নেই। সে আজকাল কলকাতায় পড়ে। জাম গাছে চড়বার যোগ্য মেয়ে আজকাল একটিও নেই— লাবী" আছে, কিন্তু কিছুদিন থেকে তার শরীর অসুস্থ। দিনুর ঘরের সামনেকার গাছে কাচা পেয়ারাগুলো প্রায় পাকবার অবস্থা হয়েচে– এমন দুৰ্গতি! দুঃখের কথা আর কি বলব, আমলকিগুলো গাছের তলায় ঝরে ঝরে পড়চে— গাছে উঠে পেড়ে নেয় এমন দুঃসাহসিকা আজ কোথায়?— বড় শীত পড়েচে— উত্তরে বাতাস সাই সাঁই করে এসে একেবারে কলিজার ভিতরে ঢুকে কাপুনি ধরিয়ে দিচ্চে। কিন্তু স্নানের সময় এল, এখন শীতের হাওয়ার মধ্যে শীতের জল এসে জুট্ৰকেন— কিন্তু আমি পিছব না। ইতি ১০ পৌষ ১৩২৬ ভানুদাদা Ꮌ ©