১৩ জুলাই ১৯২২ [কলকাতা} রাণু কলকাতা সহরটা আমি মোটেই পছন্দ করিনে— মনে হয় যেন ইট কাঠের একটা মত্ত জন্তু আমাকে একেবারে গিলে ফেলেচে । তার উপরে আবার আকাশ মেঘে লেপা, রাত্তির থেকে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়চে । শান্তিনিকেতনের মাঠে যখন বাদল নামে তখন তার ছায়ায় আকাশের আলো করুণ হয়ে আসে, ঘাসে ঘাসে পুলক লাগে, গাছগুলি যেন কথা কইত্ত্বে চায়, আমার মনের মধ্যে গান জেগে ওঠে আর তার সুর গিয়ে পৌঁছয় দিনুর ঘরে। আর এখানে নববর্ষা বাড়ির ছাতে ছাতে ঠোকর খেতে খেতে খোড়া হয়ে পড়ে— কোথায় তার নৃত্য, কোথায় তার গান, কোথায় তার সবুজ রঙের উত্তরীয়, কোথায় তার পূবে বাতাসে উড়ে পড়া জটা জাল। কথা হচ্চে এবার শ্রাবণ মাসে আর বছরের মত কলকাতায় বর্ষামঙ্গল গান হবে P কিন্তু যে গান শাস্তিনিকেতনের মাঠে তৈরি হয়েচে সে গান কি কলকাতা সহরের হাটে জমবে? এখানে অনুরোধে পড়ে কখনো কখনো আমার নতুন বর্ষার গান গাইতে হয়েচে । কিন্তু এখানকার বৈঠকখানায় সেই গানের সুর ঠিক মত বাজে না। তোমাদের ওখানে এতদিনে বোধহয় বর্ষা নেমেচে– অতএব তোমার নতুন শেখা বর্ষার গান কখনো কখনো শুন শুন স্বরে গাইতে পারবে কখনো বা এসরাজে বাজিয়ে তুলবে। তুমি যাওয়ার পরে আরো কিছু কিছু নতুন গান আমার সেই খাতায় জমে উঠেচে । কলকাতায় না এলে আরো জমত। এদিকে দিনুবাবুও দাত তোলাবার জন্যে দু তিন দিন হল কলকাতায় এসেচেন। আষাঢ় মাসের বর্ষাকে এ সহরে যেমন মানায় >br8
পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।