পাতা:চিঠিপত্র (দশম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এমন সময় কলিকাতায় পিস্ এসোসিয়েশনের নোটিশ পড়িলাম, ‘বঙ্গভাষা ও ও সাহিত্য’ সম্বন্ধে গবেষণামূলক সর্বোত্তম প্রবন্ধের পুরস্কার একটি রৌপ্য পদক দেওয়া হইবে। প্রবন্ধের বিচারক হইবেন চন্দ্রনাথ বসু ও রজনীকান্ত গুপ্ত।

 আমি বঙ্গের প্রাচীন সাহিত্য লইয়া একদিন ঘাঁটাঘাটি করিয়াছিলাম, সুতরাং এ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখিতে সহজেই প্রবৃত্ত হইলাম।...পিস্ এসোসিয়েশন ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ সম্বন্ধে আমার প্রবন্ধই পুরস্কারযোগ্য মনে করিয়াছিলেন। এই প্রবন্ধের সঙ্গে সঙ্গেই আমি ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস লিখিতে শুরু করিয়াছিলাম।

 ...কুমিল্লায় ১৮৯৬ সনে যখন আমি উৎকট রোগশয্যায় [মস্তিষ্ক পীড়ায়] পড়িয়াছিলাম, এবং যখন বঙ্গভাষা ও সাহিত্য প্রথম প্রকাশিত হয় [১ম ভাগ ২ ডিসেম্বর, ১৮৯৬] সেই সময় ... আমি রবীন্দ্রবাবুর একখানি চিঠি পাইয়াছিলাম। তাহা একটা গৌরবের জিনিস বলিয়া আমি অনেকদিন রাখিয়া দিয়াছিলাম। ছোট একখানি কাগজ দো-ভাঁজ করিয়া মুক্তার মতো হরফে কবিবর লিখিয়াছিলেন, সেই প্রত্যেকটি হরফ আমার নিকট মুক্তার মতো মূল্যবান বলিয়া মনে হইয়াছিল। বঙ্গ-সাহিত্যের রাজার অভিনন্দন সেই রাজ্যে নূতন প্রবেশার্থীর পক্ষে কত আদর-সম্মানের, তাহা সহজেই অনুমেয়। প্রথমবার কলিকাতায় আসিয়া একটি বছর ছিলাম, তখন আমি শয্যাগত— রবীন্দ্রবাবুর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয় নাই। ফরিদপুরে থাকা কালে তিনি তাঁহার ‘ক্ষণিকা’ (প্রথম প্রকাশ ১৯০০) আমাকে উপহার পাঠাইয়াছিলেন আমার মন্তব্যসম্বলিত চিঠির উত্তরে বাং ১৩০৭ সনের ৩০শে ভাদ্র তারিখে তিনি লিখিয়াছিলেন— “আপনার সমালোচনাটি কবির পক্ষে যে কত উপাদেয় হইয়াছে, তাহা ব্যক্ত করিতে পারি না। অসুস্থ শরীরে [ও] যে এই পত্রখানি[১] লিখিয়া পাঠাইয়াছেন, সেজন্য আমার অন্তরের ধন্যবাদ জানিবেন।”[২]...

 এই সময় হইতে আমাদের পরস্পরের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে পত্র-ব্যবহার চলিয়াছিল। ১৯০১ সনে কলিকাতায় ফিরিয়া যাইয়া আমি জোড়াসাঁকোর বাড়িতে তাঁহার সঙ্গে দেখা করি।

  1. দ্র° দীনেশচন্দ্র সেন- লিখিত পত্রাবলী ৫
  2. দ্র° রবীন্দ্রনাথ- লিখিত পত্র ২

৭৫