পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভয়, মানবোচিত সদগুণ-সকল— সাম্য, মৈত্রী, সৌহার্দ্য, স্বাৰ্থত্যাগ, পরোপকারপ্রবৃত্তি সহজে জাগরিত হইবে না। মহাত্মা গান্ধীও সাধক, কিন্তু তাহার সাধনা কঠিনতর— সাধারণ সংসারীজন সে সাধনা গ্রহণে অক্ষম । রবীন্দ্রনাথের ঔদার্য্য, ক্ষমা, সহিষ্ণুতা সকলকেই আলিঙ্গন করিয়াছে । তিনি পাপী তাপী দুষ্ট লোককেও অবজ্ঞা করেন নাই । তাহার মতে-— দুল্লভ এ ধরণীর তুচ্ছতম স্থান । দুল্লভ এ জগতের ব্যর্থতম প্রাণ ॥ তিনি মানুষের চরিত্রের প্রতি আস্থা হারান নাই । অবশ্য মহাত্মাজীও আস্থাবান, নতুবা তিনি সত্যাগ্রহ করেন কোন সাহসে ? কিন্তু তিনি কঠোর কৰ্ম্মা, তাহাকে জগং শ্রদ্ধা করে এবং রবীন্দ্রনাথকে জগং ভালবাসে । রবীন্দ্রনাথকে তাহারা গান্ধী অপেক্ষণও আপনজন বলিয়া বাহুপাশে আবদ্ধ করিতে পারে। গান্ধী প্ৰণম্য, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তদপেক্ষা অধিকতর নিকটস্থ । শ্রীঅরবিন্দ, বিবেকানন্দ, গান্ধী, ইহার রাজনীতি সমাজনীতি ধৰ্ম্মনীতির যে-সকল ব্যাখ্যা করিয়াছেন, তাহার সর্বস্তরে রবীন্দ্রনাথের সহিত মতৈক্য দেখা যায় না। র্তাহারা কোনো না কোনো গণ্ডীতে জীবনকে আবদ্ধ করিয়াছেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ গণ্ডীবন্ধনের পক্ষপাতী নহেন ৷ রবীন্দ্রনাথ বিমুক্তচিত্ত বিশ্বপথিক । তাহার দাড়াইবার স্থান বা সময় নাই । ক্রমাগত নব নব ভাবে জীবনকে বিভাবিত ও পরিবত্তিত করিতে করিতেই এই বহুরূপধারী একদা অনন্তে, অসীমে, মহাকাশের অস্তরে হারাইয়া যাইবেন । ঐ অনন্ত আকাশই বহুবিচিত্ররূপ রবীন্দ্রনাথের মুৰ্ত্ত প্রতীক। আকাশই রবীন্দ্রনাথ । —শ্ৰীহেমন্তবালা দেবী 8 NV)