পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের দুটি বজরা ছিল, তাই তারা গেলে কোনো অসুবিধা হত না । একটি বোটের নাম আগেই উল্লেখ করেছি, অপরটির নাম ছিল 'আত্রাই’ । আমাদের আর-একটি পরগনাতে আত্রাই নদী ছিল, তার থেকে আত্রাই নামকরণ করা হয়েছিল । মনে পড়ছে আচার্য জগদীশচন্দ্র কচ্ছপের ডিম খেতে খুব ভালোবাসতেন। পদ্মার চরে বালির মধ্যে গর্ত করে কচ্ছপ ডিম পেড়ে রেখে যেত । বালির উপর তাদের পায়ের দাগ অনুসরণ করে যে লোকে ধরে ফেলত তারা কোথায় ডিম পেড়ে গেছে— বেচারির কী করে আর বুঝবে ? কচ্ছপের ডিম জগদীশবাবুর এত প্রিয় ছিল যে কলকাতায় যাবার সময় অনেকগুলো করে ডিম নিয়ে যেতেন । জগদীশচন্দ্র ও জগদিন্দ্রনাথ যখন শিলাইদায় যেতেন, বাবা তখন মাকে দিয়ে নূতন রান্না করাতেন। মায়ের হাতের রান্না খেয়ে তারা খুব খুশি হতেন। পরে বড়ো হয়ে তাদের মুখে মায়ের রান্নার প্রশংসা অনেক শুনেছি। মায়ের যে শুধু রান্নার স্বনাম ছিল তা নয় তার ভাগ নে ভাগ নিরা, ভাশুরপো ও তাদের বউরা সকলে তাকে খুব ভালোবাসতেন। আমার এক পিসতুতো বোন দুঃখ করে আমার কাছে বলেছিলেন যে মামি গিয়ে মামাবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচে গেছে । শিলাইদা থেকে আমরা শান্তিনিকেতনে ফিরে এলুম। সেখানে অতিথিশালায় ছিলুম। সেখানকার একটা ছবি মনে পড়ে— সরু এক ফালি বারান্দায় একটা তোলা উকুন নিয়ে মা বসে রান্না করছেন আর তার পিসিমা রাজলক্ষ্মী-দিদিমা তরকারি কুটতে কুটতে গল্প করছেন। আর-একটা ছবি মনে পড়ে— শান্তিনিকেতন-বাড়ির দোতলার গাড়িবারান্দার ছাতে একটা টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে, মার হাতে একটা ইংরেজি নভেল, তার থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিদিমাকে পড়ে শোনাচ্ছেন । গল্প শোনবার লোভে কোনো কোনো সময় তাদের গল্পের আসরে গিয়ে >W @