পাতা:চিত্রা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৭৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৮
চিত্রা।

ধনীর আদরে গরব না ধরে!-এতই হয়েছ ভিন্ন
কোন খানে লেশ নাহি অবশেষ সে দিনের কোন চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি, ক্ষুধাহরা সুধারাশি;
যত হাস আজ, যত কর সাজ, ছিলে দেবী, হলে দাসী।


বিদীর্ণহিয়া ফিয়িয়া ফিরিয়া চারিদিকে চেয়ে দেখি;
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে, সেই আম গাছ এ কি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক কালের কথা।
সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিক ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন,—
ভাবিলাম হায় আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন!
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে;
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা!
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।


হেনকালে হায় যমদূত প্রায় কোথা হতে এল মালী!
ঝুটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুয়ে পাড়িতে লাগিল গালী।