পাতা:চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চিত্রে জয়দেব

 সারাদিন মন্দিরে উপবাসী থেকে জগন্নাথদেবের পূজা করে। মন্দির-সংলগ্ন চত্বরে সেই অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীতে ধর্না দিয়ে শুয়ে থাকে। যতক্ষণ না জগন্নাথদেব দর্শন দিচ্ছেন, ততক্ষণ সেই দম্পতী সেই অবস্থায় ধর্না দিয়ে শুয়ে থাকে।

 তৃতীয় দিনের রাত্রিতে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গেই স্বপ্ন দেখলো, মন্দিরচত্বর আলোকিত করে এক জ্যোতির্ম্ময় মূর্ত্তি আবির্ভূত হলো, দুজনের দিকে আলোকহস্ত প্রসারিত করে আশীর্ব্বাদ করলেন, তোমাদের বাসনা পূর্ণ হবে!

 দম্পতী আনন্দিতচিত্তে প্রভাতে ভূমিশয্যা ত্যাগ করে উঠে পড়ে। জগন্নাথদেবের নাম কীর্ত্তন করতে করতে পুনরায় সমুদ্র-স্নান করে। স্নান-অন্তে মন্দির-পরিভ্রমণ করে আনন্দিতচিত্তে আবার স্বদেশে ফিরে যায়। স্বপ্নে জগন্নাথদেব স্বয়ং আশ্বাস দিয়েছেন, তাদের বাসনা সার্থক হবে। দম্পতীর অন্তর থেকে সব খেদ দূর হয়ে যায়।

 দম্পতীর অন্তরের একমাত্র বাসনা ছিল, সন্তানলাভ। তাদের আনন্দের সংসারে ছিল না কোন শিশু। সন্তানের অভাবে অন্তরের সমস্ত স্নেহ-ক্ষুধা অন্তরেই নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছিল। তাই স্বামী-স্ত্রীতে বহু দেবতার দরজায় ধর্না দিয়েছে, বহু দেবতার কাছে মানৎ করেছে কিন্তু কোন দেবতাই তাদের অন্তরের আহ্বানে সাড়া দেয় নি। তাই শপথ করে জগন্নাথদেবের শরণাপন্ন হয়, শপথ করে যে জগন্নাথদেব যদি পুত্র-সন্তান দেন, তাহলে সে-সন্তানকে তাঁরই সেবায় নিযুক্ত করবে, যদি কন্যা দেন তাহলে সে কন্যাকে তাঁর দাসীরূপেই তাঁর কাছে উৎসর্গ করবে। জগন্নাথদেব তাদের সেই আকুল আহ্বানে সাড়া দিলেন। আশ্বাস দিলেন, অচিরেই তাদের মনোবাঞ্ছা সফল হবে।

চার

 অচিরেই তাদের মনোবাঞ্ছা সফল হলো। জগন্নাথদেবের আশীর্ব্বাদে ব্রাহ্মণের স্ত্রী গর্ভবর্তী হলো এবং যথাকালে ব্রাহ্মণের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করলো, পুত্র নয়, এক অপরূপ রূপলাবণ্যময়ী কন্যা। কন্যার রূপ দেখে ব্রাহ্মণ-দম্পতীর মন আনন্দে ভরে উঠলো। ব্রাহ্মণ কন্যার নাম রাখলো পদ্মাবতী।

 শৈশব থেকেই পদ্মাবতী বিস্ময়কর প্রতিভার পরিচয় দিতে লাগলো। কেউ তাকে শিখায় নি, অথচ শিশু সঙ্গীত শুনলেই আপনা থেকে নাচতে

[ছয়]