চিত্রে জয়দেব
একদিন হঠাৎ ব্রাহ্মণের দ্বারে এক সাধু এসে উপস্থিত হলেন। সাধু ভিক্ষা চাইলেন। পিতার ইঙ্গিতে পদ্মাবতী ভিক্ষাপাত্রে ভিক্ষা নিয়ে এলো। পদ্মাবতীকে দেখে সাধু হেসে উঠলেন। সে-হাসির অর্থ বুঝতে না পেরে ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করলো, হাসলেন যে?
পদ্মাবতী ভিক্ষা দিয়ে বাড়ীর ভিতর চলে গেলে সাধু জিজ্ঞাসা করলেন, এ মেয়েটি কে?
ব্রাহ্মণ সগর্ব্বে বলে, আমারই মেয়ে!
সাধু এবার অট্টহাস্য করে উঠলেন, বল্লেন, তোমার মেয়ে?
ব্রাহ্মণ বিরক্ত হয়ে বল্লো, হাঁ, আমারই মেয়ে, তাতে আপনার প্রশ্ন করবার কি আছে?
এবার সাধু গম্ভীর কণ্ঠে বল্লেন, মেয়ের অঙ্গে যে চিহ্ন দেখলাম, তাতে আমার স্থির বিশ্বাস, এ কন্যা দেবতার! দেবতার নৈবেদ্য! দেবতার নৈবেদ্যে মানুষের তো অধিকার নেই!
সহসা বিদ্যুৎ-ঝিলিকে অতীতের এক বিস্মৃত-প্রায় দিনের স্মৃতি জেগে ওঠে ব্রাহ্মণের বুকে। জগন্নাথদেবের মন্দির-চত্বরে সন্তান-আশায় পড়ে আছে স্বামী-স্ত্রী দুজনে দেবতার চরণ ধরে। মনে পড়ে ভুলে-যাওয়া সেই শপথের কথা, যদি কন্যা হয়, তাহলে তোমার দাসী করে তাকে পাঠিয়ে দেবো তোমার মন্দিরে!
সাধুর কথায় নিমেষে ব্রাহ্মণের অন্তরে ঘটে যায় বিপুল এক বিপর্য্যয়। পাংশু হয়ে আসে ব্রাহ্মণের মুখ। কম্পিতকণ্ঠে ব্রাহ্মণ বলে, হে সন্ন্যাসী, তোমার দৃষ্টি ভুল দেখে নি। এই কন্যা জন্মাবার আগে, আমি শপথ করেছিলাম, কন্যাকে দেবদাসীরূপে জগন্নাথমন্দিরে সমর্পণ করবো!
স্মিতহাস্যে সাধু বলেন, সে-শপথ রক্ষা কর আজ! দেবতার যা প্রাপ্য, মানুষের লোভে ঘটিয়ো না তার অন্তরায়!
বেদনায় আর্ত্তনাদ করে ওঠে ব্রাহ্মণ। বলে, সন্ন্যাসী, তুমি কি বুঝবে অন্ধ পিতৃ-স্নেহের কি জ্বালা? বেশ ছিলাম, ভুলেছিলাম শপথ, কেন তুমি মনে করিয়ে দিতে এলে সাধু?
তেমনি হেসে সাধু বলেন, আমি না এলেও, শপথের কথা তোমাকে মনে
[আট]